Baranagar Shootout: বরানগর শিউরে ওঠা: প্রদীপ-রেখার প্রণয় ট্র্যাজেডি, বন্দুকের নিশানা কি ভুল ছিল?

উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বরানগরে (Baranagar Shootout) ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর গুলি চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রদীপ দে-এর ভূমিকা ও তার ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কেন্দ্র করে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। বরানগরের এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি অপরাধমূলক কাজ নয়, বরং এর নেপথ্যে রয়েছে জটিল প্রণয় ঘটিত সম্পর্কের টানাপোড়েন, যা শেষ পর্যন্ত খুনের চেষ্টায় গিয়ে ঠেকে।

ঘটনার মূল চরিত্র ও প্রেক্ষাপট

এই ঘটনার মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে প্রদীপ দে-এর নাম। পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, প্রদীপ দে-ই বন্দুক জোগাড় করেছিল এবং সুকান্ত আদক ও শামীম লস্কর নামে দু’জনকে ভাড়া করেছিল বিকাশ মজুমদারকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর জন্য। চমকপ্রদ তথ্য হলো, অভিযুক্ত প্রদীপ দে, আক্রান্ত বিকাশ মজুমদার-এর আত্মীয়। এই আত্মীয়তার সূত্র ধরেই প্রদীপ দে-এর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিকাশের স্ত্রী, রেখা মজুমদার-এর।

 প্রণয় ঘটিত জটিলতা: রেখার সম্পর্কের টানাপোড়েন

পুলিশের তদন্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হলো, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে প্রণয় ঘটিত সম্পর্ক। রেখা মজুমদারের সঙ্গে প্রদীপ দে-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, এই অবৈধ সম্পর্কের জেরে সৃষ্ট জটিলতাই এই বর্বরোচিত ঘটনার মূল কারণ। প্রদীপ দে এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করেই বিকাশ মজুমদারকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে তদন্তে পুলিশ

ডিসি সাউথ ব্যারাকপুর অনুপম সিং জানিয়েছেন, পুলিশ মূলত তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছিল এবং সেই সূত্র ধরেই মূল কারণটি খুঁজে পায়:

১. টার্গেট বিভ্রান্তি: প্রথমে পুলিশের মনে হয়েছিল, হয়তো গুলি করতে আসা ব্যক্তিরা ভুলবশত বিকাশ মজুমদারকে টার্গেট করেছেন, অন্য কেউ হয়তো তাদের আসল লক্ষ্য ছিল।

২. প্রমোটিং বিবাদ: দ্বিতীয়ত, ওই অঞ্চলে যে হারে প্রমোটিং চলছে, সেখানে ভয় দেখানোর কোনো উদ্দেশ্যে এই হামলা হতে পারে কিনা, সেই দিকটিও খতিয়ে দেখা হয়েছিল।

৩. স্ত্রীর প্রণয় ঘটিত সম্পর্ক: কিন্তু গভীর তদন্তের পর তৃতীয় কারণটিই সত্য বলে প্রমাণিত হয়—বিকাশ মজুমদারের স্ত্রীর সঙ্গে প্রদীপ দে-এর অবৈধ সম্পর্কই এই ঘটনার অনুঘটক।

ড্যাম পড়া কার্তুজ: কেন ব্যর্থ হলো হামলা?

পুলিশের অনুমান, যে বন্দুকটি এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটি ছিল দেশি বন্দুক। এমনকি, গুলি চালানোর সময় কার্তুজটি ‘ড্যাম পড়া কার্তুজ’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঠিক এই কারণেই গুলি ঠিকমতো চলেনি এবং বিকাশ মজুমদার প্রাণে বেঁচে যান। যদিও পুলিশ এখনো সেই বন্দুকটি উদ্ধার করতে পারেনি, তবে ডিসি সাউথ ব্যারাকপুর অনুপম সিং আশা প্রকাশ করেছেন যে তদন্তের মাধ্যমে সমস্ত তথ্যই জানা যাবে। ভাড়াটে খুনি সুকান্ত আদক ও শামীম লস্করকে গ্রেপ্তারের পর এখন মূল অভিযুক্ত প্রদীপ দে-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে দ্রুত বন্দুকটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

বরানগরের এই ঘটনা এক আত্মীয়, এক স্ত্রী এবং এক প্রেমিকের ত্রিকোণ সম্পর্কের এক ভয়ঙ্কর পরিণতি তুলে ধরেছে, যেখানে ব্যক্তিগত আবেগ অপরাধের পথ দেখিয়েছে।