সৌভিক সরকার, ব্যারাকপুর: ১০০ বছরের পুরনো ব্যারাকপুর আদালত স্থানান্তরিত হতে চলেছে । রাত পোহালেই অর্থাৎ ১লা অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালেই ব্যারাকপুর আদালতের নতুন ভবনের দ্বার উদ্ঘাটন হতে চলেছে।
এই খবরে খুশির হাওয়া যেমন রয়েছে আদালতের সাথে যুক্ত থাকা মানুষদের মধ্যে, তেমনি মনের ভেতর রয়েছে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা । ১০০ বছরের পুরনো ব্যারাকপুর আদালত দীর্ঘদিন ধরে বয়সের ভারে রয়েছে। সেই আদালতের ভবনের দেয়ালে গজিয়েছে আগাছা। কোথাও আবার বয়সের ভারে ভেঙে পড়ছে চাঙ্গর। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি ছিল নতুন আদালত ভবনের।
সেই ভবন তৈরি হয়ে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। রাত পোহালেই বৃহস্পতিবার সকালে ভার্চুয়াল উদ্বোধন হবে সেই ভবনের। এদিকে পুরনো ভবনে চলছে শেষ মুহূর্তের আদালতের কাজ স্থানান্তরিত করার ।
এমন পরিস্থিতিতে কার্যত নিজের পুরনো ঘর থেকে বিচ্ছেদেরঅপেক্ষায় আইনজীবী থেকে ল-ক্লার্ক, টাইপিস্টরা।
পুরনো এই আদালতে কেউ কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ৫২ বছর কেউবা ৪২ বছর। পুরনো আদালত ভবনে কাটানোর সময় নিয়ে বলতে গিয়ে ব্যারাকপুর আদালতের ল-ক্লার্ক রাজেন সাউ জানান, “আমি আছি এখানে ১৯৭৮ সাল থেকে। আজ ৪২ বছর ধরে এই মাটির মোহটা ছাড়তে পারিনি। রোদ বৃষ্টি ঝড় আম্ফান সবকিছু উপেক্ষা করে আমি ৩৬৫ দিন কোর্ট এটেন্ড করতাম।আমার টাইম ছিল সাড়ে দশটা থেকে এগারটার মধ্যে এসে আমি চেয়ারে বসে থাকতাম। এখন চোখের জল পড়ছে না কিন্তু কাউকে বলতে বা বোঝাতে পারছিনা কষ্টটা। এই কোর্ট উঠে নতুন ভবনে যাচ্ছে খুব ভালো ব্যাপার। তবে এখানে স্বাধীনভাবে আমরা বসে কাজ করতাম কিন্তু ওখানে যদি ভালোভাবে কাজ করতে পারি তাহলে ভগবান আমাদের মঙ্গল করবেন।”
পাশাপাশি এই কোর্টে জীবনের ৫২ বছর সময় কাটানো বিশিষ্ট আইনজীবী সুভাষ দত্ত বলেন, ” আদালত নতুন ভবনে যাচ্ছে এটা খুবই আনন্দিত হওয়ার খবর।৫২টা বছর ধরে এই পরিবেশে কাজ করেছি একটা তো মানসিক যন্ত্রণা ছিলই তবে এই ভেবেই খুব খুশি যে , জীবনের শেষ টুকু সময় ভালো জায়গায় থেকে কাজ করতে পারব।”
এদিকে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে পুরনো আদালত চত্বরে চায়ের দোকান চালানো দয়ানন্দ সাউ জানান, নতুন আদালত ভবনে এখনও কোন জায়গা দেওয়া হয়নি তাই তারা জানেন না তাদের আগামীর ভবিষ্যৎ কি হতে চলেছে । ভবিষ্যৎ তো দেখছি অন্ধকার! কেউ কিছু বলছে না। না অ্যাডভোকেট বাবুরা বলছেন না আমাদের বার থেকে কিছু বলছেন । কোর্টের সাহেবরাও কিছু বলছেন না । এতদিন ধরে এখানে করে খাচ্ছি। এখন আর কিছুই বুঝতে পারছিনা কি করব।এই কোর্টের ভিতরে ১২ -১৩ টা দোকান আছে। আমাদের এখনও কোনও ব্যবস্থা হয়নি বুঝতে পারছি না আদৌ কিছু হবে কিনা!