শুক্লা রায়চৌধুরী,কলকাতাঃ ফের নক্ষত্রপতন। ২০২০ সালে মৃত্যুমিছিল যেন থামছে না বিনোদন জগতে। এবার বাংলা রক মিউজিকের দুনিয়ায়। চলে গেলেন প্রথম স্বাধীন বাংলা ব্যান্ড. মহীনের ঘোড়াগুলি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রঞ্জন ঘোষাল। বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তবে শুধু সঙ্গীতের দুনিয়াতেই তাঁর বিচরণ ছিল এমনটা নয়, লেখক ও নাট্যব্যক্তিত্ব হিসাবেও তিনি সমাদৃত হয়েছেন।
স্ত্রী সঙ্গীতা ঘোষাল ও দুই পুত্রের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতেই পাকাপাকি বসবাস করতেন রঞ্জন ঘোষাল। বৃহস্পতিবার ভোরে নিজের বাড়িতে ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমের দেশের চলে গিয়েছেন রঞ্জন ঘোষাল, বলে পরিবার সূত্রে খবর। হাইপ্রেসারের সমস্যা ছিল তাঁর। পাশাপাশি গত বছর তাঁর বিরুদ্ধে মিটু অভিযোগ উঠায় মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলেন এই শিল্পী।
অভিযোগ ছিল ফেসবুক মেসেঞ্জারে এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেন রঞ্জন ঘোষাল। ঘটনা ২০১৯-এর অক্টোবরের। সেই নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে নিজের মুহূর্তের ভুল স্বীকার করেন নিয়ে ফেসবুকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন রঞ্জন ঘোষাল। সেটাই ছিল তাঁর শেষ ফেসবুক পোস্ট। তারপর থেকে গত ৮ মাস যাবত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেখা মেলেনি তাঁর। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন রঞ্জন ঘোষাল।
১৯৭৪ সালে সাত সদস্য মিলে তৈরি হয়েছিল মহীনের ঘোড়াগুলি। শুরুতে নাম ছিল সপ্তর্ষি। রঞ্জন ঘোষাল ছাড়াও এই ব্যান্ডের সদস্যছিলেন গৌতম চট্টোপাধ্যায়, তপেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস দাস, এব্রাহাম মজুমদার, বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় ও প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।
এদিন মহীনের ঘোড়াগুলির অন্যতম সদস্য প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বন্ধুকে স্মরণ করে ফেসবুকে লেখেন,’আরও একসাথে কিছু কাজ বাকি ছিল! কত কী করার আছে বাকি….’
সংবিগ্ন পাখিকূল ও কলকাতা বিষয়ক (১৯৭৭), অজানা উড়ন্ত বস্তু বা অ-উ-ব (১৯৭৮) এবং দৃশ্যমান মহীনের ঘোড়াগুলি (১৯৭৯) এই তিন অ্যালবাম ভারতীয় রক মিউজিকের মাইলস্টোন। আশির দশকের গোড়ায় ব্যান্ড ছেড়ে নিজেদের কর্মজগতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সকলে,তবে ১৯৯৫ সালে ফের মুক্তি পায় মহীনের ঘোড়াগুলির ‘আবার বছর কুড়ি পরে’।এই অ্যালবামেরই গান ‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে’,যা আজকের জেনারেশনের কাছেও ততটাই জনপ্রিয়।
সঙ্গীতের পাশাপাশি রঞ্জন ঘোষাল, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় একাধিক কবিতা, গল্প এবং চলচ্চিত্র ও মঞ্চ নাটকের জন্য চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। বেঙ্গালুরুতে স্ত্রী সঙ্গীতার গ্রুপ থ্রি নামে একটি থিয়েটার দলের সঙ্গে ইংরেজি নাটক পরিচালনা এবং পারফর্ম করতেন রঞ্জন ঘোষাল।