বিহারের ভাগলপুর (Bhagalpur Family Seeks) জেলার নওগাছিয়ার কাদোয়া দিয়ারা এলাকার এক শিক্ষক, ঘনশ্যাম কুমার, দুই ছেলের চিকিৎসার জন্য ওষুধ না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে তার পুরো পরিবারের মৃত্যুর অনুমতি চেয়েছেন। ঘনশ্যাম কুমারের দুই ছেলে ডুচেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি (DMD) নামক এক গুরুতর রোগে আক্রান্ত, এবং তাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যয়ভার তিনি বহন করতে পারছেন না।
ঘনশ্যাম কুমারের চিঠি:
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে ঘনশ্যাম কুমার জানান, তার দুই ছেলে অনিমেষ আমান (১৫) ও অনুরাগ আনন্দ (১০) ডুচেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি নামক এই রোগে আক্রান্ত। এটি একটি জেনেটিক রোগ যা পেশীকে দুর্বল করে দেয় এবং অবশেষে পেশী ক্ষয় হয়। ডাক্তারদের মতে, তাদের চিকিৎসার জন্য PTC Translara নামক ঔষধটি প্রয়োজন, যা ২০১৪ সালে FDA দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে এবং বিশ্বের ৩৩টি দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এটি ভারতে ২০১৭ সালে ট্রায়াল করা হয়েছে, তহবিলের অভাবে এখনো ওষুধটি পাওয়া সম্ভব হয়নি।
ডাক্তারদের মতামত:
ডাক্তাররা বলছেন, PTC Translara ঔষধটি এই রোগের চিকিৎসায় কার্যকর, কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে ঘনশ্যাম কুমারের ছেলেরা এটি পেতে পারছে না। দিল্লির এইমস হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর বলা হয়েছে যে, স্বাস্থ্য বিভাগের তহবিল পাওয়ার পরেই ওষুধটি প্রদান করা হবে। এর মধ্যে, শিশুদের অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হয়ে উঠছে। ঘনশ্যাম কুমার তাদের চিকিৎসার জন্য তহবিল প্রদান করার অনুরোধ করেছেন যাতে তার ছেলেরা নতুন জীবন পেতে পারে।
অতিরিক্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের করুণ অবস্থা:
এই ঘটনার পাশাপাশি, রাজ্য সরকার একটি অতিরিক্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছিল, কিন্তু এর অবস্থা খুবই করুণ। পোঠিয়া এলাকায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছিল, যেখানে রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা মেলা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষভাবে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছিল, এবং হাসপাতালের প্রাঙ্গণসহ সেবা কেন্দ্রের অনেক জায়গায় আবর্জনা জমে ছিল। ওষুধ বিতরণের কক্ষে কোনো কর্মী উপস্থিত ছিলেন না, এবং সেবা নিতে আসা রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন।
স্বাস্থ্য সেবার পরিস্থিতি:
ফালকা ব্লক এলাকায় সিএইচও জালারাম কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে গিয়েছিলেন বলে, ওষুধ বিতরণ কক্ষটি বন্ধ ছিল। ফলে, সেবা নিতে আসা রোগীরা ওষুধ পাননি। এমনকি, মেয়াদোত্তীর্ণ মেট্রোনিডাজল ২০০ মিলিগ্রামও রোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছিল, যা স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরছে।
ঘনশ্যাম কুমারের চিঠি শুধু তার ব্যক্তিগত দুরবস্থা নয়, বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক সমস্যাকেও সামনে এনেছে। তার ছেলেদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাব, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে অসহায় মানুষের সমস্যাগুলি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।