Bilawal Bhutto: ‘মাসুদ আজহার কোথায় জানি না’, সন্ত্রাস নিয়ে বেপরোয়া বিলাওয়াল ভুট্টো; ভারতের দিকেই আঙুল তুললেন

ডিজিটাল ডেস্কঃ পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (PPP) প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো (Bilawal Bhutto) জারদারি সম্প্রতি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন যা শুধু ভারত নয়, খোদ পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীরাও বিশ্বাস করতে দ্বিধা বোধ করবে। মাসুদ আজহারের অবস্থান সম্পর্কে তিনি দাবি করেছেন যে, পাকিস্তান তার হদিস জানে না, এবং সে সম্ভবত আফগানিস্তানে থাকতে পারে। তার এই মন্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে ফের একবার পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিলাওয়াল ভুট্টোর এই মন্তব্যের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। পাকিস্তান যখন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করছে, ঠিক তখনই একজন উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক নেতার মুখে এই ধরনের কথা পাকিস্তানের দ্বৈত নীতিকেই প্রকট করে তোলে।

হাফিজ সাঈদ এবং মাসুদ আজহার: দ্বৈত অবস্থান?

সাক্ষাৎকারে বিলাওয়াল ভুট্টোকে হাফিজ সাঈদের অবাধ বিচরণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন যে, সাঈদ পাকিস্তানের হেফাজতে আছেন। তার এই বক্তব্য হাফিজ সাঈদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের আইনি পদক্ষেপের সাম্প্রতিক দাবিগুলির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু যখন মাসুদ আজহারের প্রসঙ্গ আসে, তখন বিলাওয়াল সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, “মাসুদ আজহারের ক্ষেত্রে, তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না কারণ আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।”

এই বৈপরীত্য স্পষ্টতই পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। হাফিজ সাঈদকে হেফাজতে রাখার কথা বললেও মাসুদ আজহারকে ‘খুঁজে না পাওয়ার’ যুক্তি আন্তর্জাতিক মহলে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। অনেকেই মনে করছেন, এটি আসলে পাকিস্তানের সরকারের একটি কৌশলগত অবস্থান, যেখানে তারা কিছু নির্দিষ্ট সন্ত্রাসবাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে, কিন্তু মাসুদ আজহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসবাদীকে সম্ভবত আশ্রয় দিচ্ছে অথবা তাদের সম্পর্কে তথ্য গোপন করছে।

ভারতের কাছে তথ্য চাইলেন ভুট্টো, দায় চাপালেন দিল্লির উপর

বিলাওয়াল ভুট্টো সাক্ষাৎকারে ভারতের উপর দায় চাপিয়ে বলেছেন, “যদি ভারত মনে করে যে মাসুদ আজহার পাকিস্তানে আছে, তাহলে তার সম্পর্কে তথ্য ভাগাভাগি করা উচিত। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে পেরে খুব খুশি হব।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে ভারত এই তথ্য ভাগাভাগি করছে না।

ভারতের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে মাসুদ আজহার এবং হাফিজ সাঈদের মতো সন্ত্রাসবাদীদের পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে বিলাওয়াল ভুট্টোর এই দাবি অত্যন্ত হাস্যকর বলে বিবেচিত হচ্ছে। ভারত বারবার সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান বরাবরই এই তথ্যকে অস্বীকার করে এসেছে অথবা কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিলাওয়াল ভুট্টোর এই মন্তব্যকে অনেকেই ‘উল্টো চোরকে শাপলা’ দেওয়ার মতো দেখছেন, যেখানে নিজের ব্যর্থতার দায় অন্যের উপর চাপানো হচ্ছে।

সন্ত্রাসীদের প্রতি নরম মনোভাব?

বিলাওয়াল ভুট্টোর দল, পিপিপি, বর্তমানে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোটের একটি অংশ। সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থনে বা তাদের পক্ষে বিলাওয়াল ভুট্টোর এই ধরনের বক্তব্য অবশ্য নতুন নয়। সমালোচকরা মনে করেন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাব এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির গোপন বোঝাপড়া এই ধরনের মন্তব্যের অন্যতম কারণ। বিলাওয়াল ভুট্টো নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মাসুদ আজহারের অতীত বিবেচনা করে তারা বিশ্বাস করেন যে সে আফগানিস্তানে আছে। এই ‘বিশ্বাস’ এর উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মাসুদ আজহার: ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী

মাসুদ আজহার ভারতের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ২০০১ সালের সংসদ হামলা, ২৬/১১ মুম্বাই হামলা, পাঠানকোট এবং পুলওয়ামা হামলা সহ একাধিক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৯ সালে কান্দাহার হাইজ্যাকের পর তাকে ভারত সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময়, যখন ভারত পাকিস্তানে সন্ত্রাসী শিবিরগুলিতে হামলা চালায়, তখন মাসুদ আজহার নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে ভারতীয় হামলায় তার পরিবারের ১০ জন সদস্য এবং তার চার সহযোগী নিহত হয়েছিল। ভারত ক্রমাগত পাকিস্তান সরকারের কাছে মাসুদ আজহার এবং হাফিজ সাঈদকে হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে আসছে।

বিলাওয়াল ভুট্টোর এই বক্তব্য পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থাকে আরও দুর্বল করবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।