কলকাতার বেশ কিছু বনেদি বাড়ির (Bonedi Barir Durga Puja)প্রাচীন দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম হল চোরাবাগান চ্যাটার্জি বাড়ির (Bonedi Barir Durga Puja)পুজো। এই বাড়ির প্রতিটি থামের মধ্যে লুকিয়ে আছে (Bonedi Barir Puja) ইতিহাস। বাড়ির প্রবীণদের কাছ থেকে এই বাড়ি দুর্গাপুজো (Bonedi Barir Durga Puja) সম্বন্ধে বেশকিছু তথ্য জানা যায়।
এই বাড়ির দুর্গাপুজো প্রচলনের পর প্রথমদিকে ঠাকুর দালানে (Bonedi Barir Durga Puja) মূর্তি তৈরি করা হত। কিন্তু তার বেশ কিছু বছর পর থেকে ঠাকুর কুমারটুলিতে (Bonedi Barir Durga Puja) তৈরি হয়। সেখান থেকেই মূর্তি ঠাকুরদ দালানে (Bonedi Barir Durga Puja) নিয়ে আসা হয়। জন্মাষ্টমী দিন হয় কাঠামো পুজো। মহালয়া দিন হয় মা দুর্গার চক্ষুদান। দ্বিতীয়ার দিন ঠাকুর দালানে বসানো হয়। পুজো করা হয় সেই প্রাচীন রীতি মেনেই। ঠাকুর তৈরি করা থেকে শুরু করে প্যান্ডেল এবং পুজোর আনুষঙ্গিক সমস্ত কাজ করানো হয় বংশ-পরম্পরা ক্রমিক।
আগে এই বাড়ির পুজোর চারদিনের মধ্যে একদিন নাটক পরিবেশন করা হতো। এই বাড়ির পুজোর বিশেষ আকর্ষণ হল ভোগ নিবেদন। পূর্ব-পুরুষদের নির্দেশ অনুসারে উপনয়ন হওয়া বাড়ির ছেলে এবং ভাগ্নেরা মায়ের ভোগ রান্না করেন। ভাত, খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা, মাছ, পায়েস, মিষ্টি, চাটনি সমস্ত কিছুই মায়ের সামনে ভোগে দেওয়া হয়। বিশেষ করে সপ্তমীর দিন লাউ চিংড়ি, অষ্টমীর দিন শাকের ঘণ্ট, নবমীর দিন ভেটকি ঘণ্ট, চিংড়ি মাছের মালাইকারি নিবেদন করা হয়। বহু বছর ধরে এই নিয়ম চলছে।
আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ের মধ্যে হল এই চ্যাটার্জ্জী বাড়ির পুজোতে তাদের নিজস্ব একটি গান দশমীর দিন গাওয়া হয় এবং সেই গানের সুরে সুরে মায়ের নিরঞ্জন ঘণ্টা বেজে ওঠে। দ্বিতীয়ার দিন ঠাকুরদালানে মাকে প্রতিষ্ঠা করার পর তাঁকে অস্ত্র এবং সোনার গয়নায় সুসজ্জিত করে তোলা হয়। দুর্গা মায়ের সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রত্যেককে বেনারসি পরানোর নিয়ম এ বাড়িতে রয়েছে। তবে সেটি আগের থেকে কুমারটুলিতে দিয়ে আসা হয়।
পুরাণ অনুযায়ী ষষ্ঠীর দিন বেলতলায় মা দুর্গা বিশ্রাম নেন। তাই এই বাড়িতে একটি ছোট্ট বেলতলা তৈরি করা হয় এবং মাঝরাতে অলঙ্কার পরে সেই বেলতলা থেকে ঠাকুরকে বরণ করে নিয়ে আসা হয়। বাড়ির পুরুষেরা সেই সময় ঢাক বাজান। আর এই দৃশ্য দেখবার সাক্ষী একমাত্র এই চ্যাটার্জ্জী বাড়িতেই সম্ভব।