মদনমোহন সামন্ত: 1917- র আজকের দিনে জন্মে ইন্দিরা গান্ধী ক্রমে ভারতের প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
এমন একটা দিনে এই বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা রয়েছে। 1469এর এই তিথিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক। গুরুপরবের সাথে একই সঙ্গে আজ এই পূর্ণিমাতে শতাব্দীর শেষতম দীর্ঘ চন্দ্রগ্রহণ।
সবাই জানেন, সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ যে যার পথে চলতে চলতে পৃথিবীকে মাঝখানে রেখে এক সরলরেখায় থাকলে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে চন্দ্রগ্রহণ হয়। গ্রহণ শুরুর আগে তাই চাঁদ পুরোপুরি আলোকিত থাকে যাকে আমরা পূর্ণিমা বলে থাকি। তাই পূর্ণিমা ছাড়া চন্দ্রগ্রহণ হয় না, তা-ও সন্ধ্যা থেকে ভোরের মধ্যে। পৃথিবীর ছায়া চাঁদের কতখানি অংশ ঢেকে দেবে, তার উপর নির্ভর করে পূর্ণগ্রাস, খণ্ডগ্রাস, বলয়গ্রাস ইত্যাদি তকমা। পুরোটা ছায়ায় ঢাকলে পূর্ণগ্রাস। অংশবিশেষ ঢাকলে খণ্ডগ্রাস বা আংশিক।
চারপাশে উজ্জ্বল থেকে মাঝে ছায়া পড়লে বলয়গ্রাস। এ ছাড়াও আর একটি বিষয় হল উপচ্ছায়া গ্রহণ এবং প্রচ্ছায়া গ্রহণ। মূল গাঢ় ছায়া বা প্রচ্ছায়ার চারপাশে হালকা দুর্বল ছায়া হল উপচ্ছায়া। অর্থাৎ, গ্রহণ যখন হবে তখন প্রথমে উপচ্ছায়া, তারপরে প্রচ্ছায়া আসবে, আবার প্রচ্ছায়া সরে উপচ্ছায়া হয়ে গ্রহণ শেষ হবে। তবে অনেক সময়েই উপচ্ছায়া গ্রহণ আলাদাভাবে বোঝা মুশকিল হয় তার দুর্বলতার জন্য। সামান্য স্তিমিত হয়ে আসা ছাড়া বিশেষ বোঝা না-ও যেতে পারে। প্রচ্ছায়া শুরু ধরে গ্রহণ শুরু, সবচেয়ে বেশি অংশ পৌঁছানোকে গ্রহণমধ্য, আর প্রচ্ছায়া শেষ হলে গ্রহণ শেষ বা গ্রহণমুক্তি। মোটামুটি এমনটা সাধারণত বলা হয়। সম্পূর্ণ বলতে হলে উপচ্ছায়ার হিসাবটাও ধরতে হয়।
আজকের চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে নানা ভ্রান্তিমূলক বিষয় ছড়ানো হয়েছে। সময় নিয়ে, ধরণ নিয়ে, দেখা নিয়ে – নানা রকম। একে একে আসা যাক।
এবারের চন্দ্রগ্রহণটি আংশিক বা খণ্ডগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। মানে, পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে পুরোটা ঢাকবে না। অনেকেই সেটা বলছেন না। গ্রহণ শুরু বলা হচ্ছে দিন বারোটা আটচল্লিশ মিনিটে। খুব স্বাভাবিকভাবে দিনে চন্দ্রগ্রহণের উপায় নেই। তবে? ভাল করে বলা হচ্ছে না, ভারতীয় সময় বারোটা আটচল্লিশে শুরু। এবং সেটাও প্রচ্ছায়া গ্রহণ! ভারতে দিন থাকার জন্য এই সময়টাতে গ্রহণ দেখা যাবে না। কারণ চাঁদ তখনও পূর্ব দিগন্তের নিচে থাকবে। সহজে বললে, চাঁদ তখনও উদয় হবে না।
উপচ্ছায়া গ্রহণ শুরু হবে ভারতীয় সময় এগারোটা বত্রিশ মিনিটে। ভারত থেকে দেখা সম্ভব নয়। সর্বোচ্চ প্রচ্ছায়া গ্রহণ বা গ্রহণমধ্য হবে ভারতীয় সময় দুপুর দু’টো বত্রিশ মিনিটে। ভারত থেকে দেখা যাবে না। প্রচ্ছায়া গ্রহণ শেষ হবে ভারতীয় সময় বিকাল চারটা সতের মিনিটে। ভারত থেকে দেখা যাবে না, তখনও চাঁদ না ওঠায়। উপচ্ছায়া গ্রহণ শেষ হবে ভারতীয় সময় বিকাল পাঁচটা তেত্রিশ মিনিটে। ইতিমধ্যে চাঁদ উঠবে ভারতীয় সময় বিকাল চারটা তিপান্ন মিনিটে (কলকাতার স্থানীয় সময় হিসাবে, মানে কলকাতায় বসে ঘড়ি দেখলে)। অর্থাৎ আমরা শুধু উপচ্ছায়া গ্রহণের কিছু অংশ দেখতে পাব , প্রায় না দেখার মতই। মোটামুটি চল্লিশ মিনিট সময় থাকবে হাতে। সর্বোচ্চ দেখা যাবে ভারতীয় সময় বিকাল চারটা সাতান্ন মিনিটে। তা-ও আবার উঁচু জায়গাতে গিয়ে, যেখান থেকে দিগন্তরেখা দেখা যায় এমন জায়গায় থাকলে।
কোনও কোনও বিদগ্ধ আবার সূর্যগ্রহণ আর চন্দ্রগ্রহণ গুলিয়ে ফেলে এই গ্রহণেও গ্রহণচশমা ব্যবহার করার নিদান দিয়ে বসে আছেন। জেনে রাখা ভাল কোনও চন্দ্রগ্রহণেই দেখার জন্য গ্রহণচশমার দরকার পড়ে না । তবে আজ আর তেমন দেখার কিছু পাওয়া যাচ্ছে না । তায় আবার মেঘছানারা একটু আদর করে চাদর বিছিয়ে দিলে ষোলকলা পূর্ণ! অচন্দ্রমপশ্যা হতে বাকি থাকবে না। অতএব লম্ফঝম্পের অবকাশ নেই।