পল্লব হাজরা, বরাহনগর: কার্তিক মাসের পূর্ণিমাই রাসপূর্ণিমা। দেশ জুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হয় রাসযাত্ৰা। দেশের রাস উৎসবগুলির মধ্যে মথুরা ও বৃন্দাবন, ওড়িশা, মনিপুর সহ এই রাজ্যে নদীয়ার নবদ্বীপ এবং শান্তিপুর বিখ্যাত। তবে এই বছর থেকে রাস যাত্রার দেখা মিলবে বরাহনগরে। আজ বৃহস্পতিবার বরাহনগরে শুভ উদ্বোধন হয় এই উৎসবের , চলবে আগামী চার দিন।
রাস মূলত কৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব হলেও বাঙালীর কাছে এই উৎসব অত্যন্ত প্ৰিয়। রাস কথাটির উৎপত্তি রস থেকে। রস অর্থে সার, নির্যাস,হাস্যরস, বাৎসল্য রস, মধুর রস ,আনন্দ, হ্লাদ, অমৃত ও ব্রহ্ম বোঝায়। অনেকে মনে করেন ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার মহামিলনই রাস।
লোক কথা অনুসারে বৃন্দাবনে শ্রী কৃষ্ণের সুমধুর বাঁশির সুরে গোপিনীরা সংসার ধর্ম ত্যাগ করে শ্রী কৃষ্ণের চরণে নিজেদের সমর্পণ করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের অনুরোধ সত্ত্বেও গোপিনীরা ছিলেন দৃঢ় চিত্তে। শ্রী কৃষ্ণের প্রতি গোপিনীদের এরূপ ভক্তি দেখে, তাঁদের মনস্কামনা পূরণে আরম্ভ হয় রাসলীলার।
শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের অধীন ভেবে গোপিনীদের মন আত্মঅহংকার পূর্ণতা পায়। সেই সময় শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে নিয়ে অন্তর্ধান হন। গোপিনীবৃন্দ তাঁদের ভুল বুঝতে পেরে একাগ্রচিত্তে শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করতে শুরু করেন। ফলস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণ ফিরে আসেন ও গোপিনীদের মানব জীবনের পরমার্থ বুঝিয়ে তাঁদের অন্তরাত্মা শুদ্ধ করেন। গোপিনীদের ইচ্ছাকে তিনি সম্মান জানিয়ে ‘যতজন গোপিনী, ততজন কৃষ্ণ’হয়ে গোপিনীদের মনের অভিলাষ পূর্ণ করেছিলেন। বলা হয় এই ভাবেই রাস উৎসব শুরু হয়।
বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের বাস উত্তর শহরতলীর বরাহনগরে। এই বরাহনগর বরাবরই উৎসবমুখর। প্রায় সারা বছর ধরেই নানারকম উৎসব হয় বরাহনগরে। এবার যোগ হলো রাস যাত্রা উৎসব। বরাহনগর ‘বান্ধব ওয়েল ফেয়ার অর্গানাইজেশন’- রাসযাত্রা প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্যে দিয়ে শুভ উদ্বোধন করেন দমদম লোকসভার সাংসদ অধ্যাপক সৌগত রায়। উপস্থিত ছিলেন বরাহনগর বিধানসভার বিধায়ক তাপস রায়, আলমবাজার মঠের মহারাজ স্বামী সারদাত্মানন্দজী , কো-অর্ডিনেটর অঞ্জন পাল, বিশ্বজিৎ বর্ধন, দিলীপ নারায়ণ বসু , রামকৃষ্ণ পাল, সরমা পাল সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
উদ্যোক্তা কমল পন্ডিত জানান, বরাহনগরে রাসযাত্রা এবারই প্রথম বর্ষ। শান্তিপুরের রাসযাত্রা বরাহনগরবাসীর কাছে উপহার দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য। তবে করোনাবিধির কথা মাথায় রেখে তেমন কোন পদযাত্রা এবছর দেখা যাবে না। উৎসবের চারদিন থাকবে বিশেষ পূজাঅর্চনা এবং শ্রীকৃষ্ণের নামসংকীর্তন।
অপর দিকে উৎসবকে ঘিরে মানুষের উন্মাদনা ছিল চোখে পরার মতো। বরাহনগরের বুকে রাস উৎসব হওয়ায় খুশি ভক্ত থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা।