কোপার (Copa America) শেষ চারে আর্জেন্টিনা যে জায়গা করে নেবে, তা নিয়ে হয়ত কারও কোনও সন্দেহ ছিল না। ধারে-ভারে তো বটেই চলতি টুর্নামেন্টে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু সেই ইকুয়েডরের বিরুদ্ধেই এমন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে কে জানতো! আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে জমে ওঠে আর্জেন্টিনার লড়াই। ম্যাচের ভাগ্য শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ হয় টাইব্রেকারে। সেখানেও লিওনেল মেসির গোল মিস। তবে বাকিদের সফল স্পট কিক ও এমি মার্টিনেজের জাদুকরি হাতের ছোঁয়ায় টাইব্রেকার পরীক্ষায় উতরে যায় আর্জেন্টিনা। ইকুয়েডরকে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে লিওনেল স্কালোনির দল।
শুক্রবার ভোরে (ভারতীয় সময়) কোপা আমেরিকার (Copa America) কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচের নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে শেষ করে আর্জেন্টিনা। এরপর টাইব্রেকারে গিয়ে জয় পায় ৪-২ গোলের ব্যবধানে।
এদিন ইকুয়েডরের বিপক্ষে শুরুতে যেন চেনাই যায়নি আর্জেন্টিনাকে। বরং আক্রমণে ভীতি ছড়িয়ে প্রথম ১৯ মিনিট আর্জেন্টিনার রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় ইকুয়েডর। এনার ভ্যালেন্সিয়া, কেইসোডো এবং ১৭ বছরের তরুণ কেন্ড্রি পায়েজ মিলে পরীক্ষা নেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। প্রথম ১০থেকে ১৯তম মিনিটে বলা চলে এক চেটিয়া আধিপত্য চলে ইকুয়েডরের। বিরতির আগে আর্জেন্টিনা ৬৪ শতাংশ সময় বল দখলে রাখলেও প্রথম আক্রমণটা করে ইকুয়েডর। ম্যাচের দশম মিনিটে প্রথমবার আক্রমণে যায় তারা। তবে, সারমিনতোর নেওয়া কঠিন শট ফিরিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে রক্ষা করেন এমি মার্টিনেজ।
পরের মিনিটের মাথায় আবারও ইকুয়েডরের আক্রমণ। এবারের শটটি যায় বারের উপর দিয়ে। সময়ের সাথে আর্জেন্টিনাও ফেরে আপন ছন্দে। ২৬তম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় তারা। তবে, এঞ্জোর মার্টিনেজ সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন। কিছুক্ষণ বাদে ফের একবার সুযোগ মিস হয় এঞ্জোর। তবে পর পর দুবার সুযোগ হাতছাড়া করা আর্জেন্টিনা উৎসবের উপলক্ষ্য পেয়ে যায় দ্রুতই। ৩৫তম মিনিটে সেই উৎসব এনে দেন লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। লিওনেল মেসির কর্নার কিক থেকে পাওয়া বল ডি ব্ক্স থেকে লেসান্দ্রোকে বাড়িয়ে দেন অ্যালিস্টার। লেসান্দ্রো আর মিস করেননি। দারুণ হেডে স্কোরশিটে নাম নাম তোলেন লেসান্দ্রো। এগিয়ে যাওয়ার পর বেশ কয়েক দফায় আক্রমণ চালিয়েও আর জালের দেখা পায়নি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। উল্টো বিরতির পর ৫৪তম মিনিটে গোল খেতে বসে আর্জেন্টিনা। এমির হাত আরেকবার রক্ষা করে তাদের। ইকুয়েডরের বড় সুযোগটা আসে ৬০তম মিনিটে। প্রতিপক্ষের ডি বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পেয়ে যায় তারা। কিন্তু এনার ভ্যালেন্সিয়ার ব্যর্থ পেনাল্টি কিকে হতাশায় ডোবে ইকুয়েডর।
চোট কাটিয়ে ফেরা মেসিকেও আজ দেখা যায়নি চেনা ছন্দে। ম্যাচের ৬৭তম মিনিটে নিজের প্রথম সুযোগটি পান মায়ামি তারকা। প্রতিপক্ষের ডি বক্সের থেকে দারুণ শট নেন বিশ্বসেরা ফুটবলার। তবে ভ্যালেন্সিয়ার গোল ঠেকিয়ে দিয়ে মেসিকে গোলহীন রাখেন।
বাকি সময়ে (Copa America) কয়েক দফায় আক্রমণে গিয়েও কেউই নাম লেখাতে পারেননি স্কোরশিটে। ফলে শুরুর ব্যবধান ধরে রেখেই সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করার পথে হাঁটে তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটেই আর্জেন্টিনাকে স্তব্ধ করে গোল আদায় করে নেয় ইকুয়েডর। ফলে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয় টাইব্রেকারে।
প্রথম শট নেন মেসি। কিন্তু তার শট গিয়ে লাগে গোলবারে। এরপর প্রতিপক্ষের শট ফেরান ‘দিবু’ মার্টিনেজ। তৃতীয় শটে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম গোলটি করেন জুলিয়ান আলভারেজ। কিন্তু মার্টিনেজকে ফাঁকি দিতে পারছিল না ইকুয়েডর। শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা। আরও একবার বর্তমান আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক হয়ে গেলেন মার্টিনেজ।