শেষবার ২০০২ সালে ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের পর বৈশ্বিক আসরে তেমন কোনো সাফল্য নেই পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। সময়ের সাথে কোপা আমেরিকাতেও (Copa America) সেলেসাওদের সেই দৈন্যতা ফুটে উঠেছে। এবার রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের কাছে হেরে কোয়ার্টার থেকে বিদায় নিয়েছে দরিভাল জুনিয়র শিষ্যরা।
আর্জেন্টিনার সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৫বার কোপার শিরোপাজয়ী উরুগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে হেরে চলতি আরস থেকে ব্রাজিলের বিদায় ঘটল। রবিবার ম্যাচটিতে এক পর্যায়ে উরুগুয়ে ১০ জনের দলে পরিণত হলেও ব্রাজিল গোল করতে পারেনি। তাদের উদ্দেশ্যবিহীন এলোমেলো ফুটবল দেখে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক যে হলুদ জার্সিতে খেলা এই দলটা কি সত্যিই ব্রাজিল?
চোটের কারণে নেইমার এবার কোপায় (Copa America) খেলতে পারছেন না। পরপর দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখায় ভিনিসিয়ুস জুনিয়রও আজ মাঠে ছিলেন না। তারা থাকলেও কি পরিস্থিতি বদলাত? সম্ভবত না। গত দুই বছর ধরেই তো ব্রাজিলের ফুটবলে শনির দশা চলছে। কাতার বিশ্বকাপে বিধ্বস্ত হওয়ার পর তাদের কোচ নিয়োগ দিতেই প্রায় দেড় বছর লেগে গেছে। দরিভাল জুনিয়রের প্রথম বড় মিশন এভাবে শেষ হবে কে জানত?
লাস ভেগাসে প্রথমার্ধের শুরুতে সেভাবে আক্রমণে যেতে পারেনি সেলেসাওরা। অন্যদিকে ব্রাজিলের রক্ষণভাগকে বেশ চাপে রেখেছিল উরুগুয়ে। ম্যাচের ১৮তম মিনিটে ডারইউন নুনেজের দুর্দান্ত এক হেড রুখে দেন ব্রাজিলের ডিফেন্ডাররা। এক মিনিট ব্যবধানে ফের আক্রমণে আসে উরুগুয়ে। কর্নার থেকে নিকোলাস ডে লা ক্রুস শট মাথিয়াস ওলিভেরা মাথায় লেগে গোলবারের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ তৈরি করেছিল উরুগুয়ে। গোলবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায় নুনেজের হেড।
সেখান থেকে কাউন্টার অ্যাটাকে যায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বল নিয়ে একাই উরুগুয়ের রক্ষণভাগে ঢোকেন রাফিনহা। গোলকিপারকে পরাস্ত করে লক্ষ্যভেদ করতে না পারলেও কর্নার আদায় করে নেন বার্সেলোনোর এই ফরোয়ার্ড। তবে কর্নার কিক থেকেও আসেনি প্রত্যাশিত গোল। ম্যাচের ৪৩তম মিনিটে ফের আক্রমণে আসেন লা ক্রুস। উগার্তের অ্যাসিস্টে এবারও গোলবারের বাঁ-প্রান্ত দিয়ে মেরে বসেন। ইনজুরি টাইমে ব্রাজিলও আক্রমণে এসেছিল। তবে গোলরক্ষক সার্জিও রচেটের দেয়াল ভাঙতে পারেননি রাফিনহা। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ম্যাচের ৪৭তম মিনিটে ভালো সুযোগও পেয়েছিল উরুগুয়ে। কিন্তু ভালবার্দের দূরপাল্লার শট সহজেই প্রতিহত করেন অ্যালিসন বেকার। এরপর ৫২তম মিনিটে দানিলোর গায়ে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় ডারউইন নুনেজের শট। ৬২তম মিনিটে ভালবার্দের দূরপাল্লার আরেকটি গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় উরুগুয়ে। রদ্রিগোকে পেছন থেকে পায়ে ট্যাকেল করে লাল-কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন নান্দেজ। সেই সুযোগে একের পর এক আক্রমণ চালায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের ৮৪তম মিনিটে এন্ড্রিকের শট সহজেই তালুবন্দী করেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক সার্জিও রোচেত। টানটান উত্তেজনা আর উত্তাপের ম্যাচে নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষেও কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি কোনো দলই।
ব্রাজিলের এমন হতাশাজনক হার মেনে নিতে পারছেন না ভক্তরা। টাইব্রেকারে হারলেও ম্যাচে দারুণ কিছু সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। তবে, ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় তা আর লুফে নিতে পারেনি কোপায় (Copa America) ৯ বারের চ্যাম্পিয়নরা। যার ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর সেখানে শেষ হাসি উরুগুয়ের।
হারের পর ব্রাজিল তারকা দানিলো বলেন, ‘আমরা একজন খেলোয়াড় কম খেলার সুবিধা নিতে পারিনি। আমাদের আরো সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল দুটি সুযোগের ক্ষেত্রে। আমাদের যা কিছু ছিল, সব নিয়েই লড়াই করেছি। ভালো পারফর্ম করছি। তারপর পেনাল্টি। পেনাল্টিতেও প্রায় সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু উরগুয়ে তরুণ হলেও তারা তাদের দক্ষতা দেখিয়েছে।’
দানিলো আরও যোগ করেন, ‘আমি আশা করবো, সমর্থকরা যেন ধৈর্য ধরে। এটা সত্যি যে, ব্রাজিল দীর্ঘদিন ট্রফি জিতছে না। কিন্তু এই তরুণ দলটার প্রতি আস্থা রাখা উচিত। আমি আমার কথা বলছি না। আমি জানি না কতদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারবো। এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের উপর সবার ভরসা করা উচিত।’