ইকবাল ছবির কথা অনেকেরই মনে আছে। ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া রাজেশ কুকনুরের সেই পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিতে দেখানো হয়েছে সব বাধা কাটিয়ে মূক ও বধির ইকবালের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প। বাস্তবেও, বধিরতা (Deafness) থেকে মুক্তি পাওয়া এখন আর অসম্ভব নেই। ককলিয়া প্রতিস্থাপন করলে বধিরতা থেকে মুক্তি পেতে পারে আপনার সন্তানও। শুধু তাই নয়, উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে বাকশক্তিও ফিরে পেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জন্ম থেকে কেউ শুনতে না পেলে কথাও বলতে শেখে না। আধুনিক চিকিৎসায় শ্রবণক্ষমতা ও বাকশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।এসএসকেএম হাসপাতালের বাক ও শ্রবণ বিশেষজ্ঞ বা অডিওলজিস্ট এন্ড স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথোলজিস্ট মহম্মদ শাহীদুল আরেফিন বলেন, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এমন উপায় রয়েছে যেখানে উপযুক্ত চিকিৎসা এবং যেভাবে প্রয়োজন সেইভাবে কাউন্সিলিং করলে জন্মগত বধিরতা(Deafness) ও কথা বলতে না পারা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। এজন্য কানের ভিতরে থাকা ককলিয়া প্রতিস্থাপন করতে হতে পারে। এই চিকিৎসায় সেরকম কোনও ঝুঁকি নেই বলেও তিনি দাবি করেছেন।
কলকাতায় এ বিষয়ে এক আলোচনাসভায় চিকিৎসকরা বলেন,সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এটি হল কৃত্রিম শ্রবণযন্ত্র। ককলিয়া শব্দ শুনতে এবং অন্তঃকর্ণ থেকে শব্দ মস্তিস্কে পাঠাতে সাহায্য করে। যদি দেখা যার কারও শ্রবণ অক্ষমতা বা হিয়ারিং লস আছে সেক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখা দরকার যে সেটি জন্মগত না পরে সমস্যা তৈরি হয়েছে এবং শ্রবণযন্ত্র কাজ করবে কিনা। যদি দেখা যায় শ্রবণযন্ত কাজ করবে না, তখনই কললিয়ার প্রতিস্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে ককলিয়ার মধ্যে ইলেক্ট্রোড অ্যারে বা কৃত্রিম ককলিয়া বসিয়ে দেওয়া হয়। এর দুটি অংশ, একটি কানের ভিতরে এবং আরেকটি কানের বাইরে থাকে।
এর পরে উপযুক্ত স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ স্টিমুলেশন বা থেরাপি বা অডিটরি রিহ্যাবিলিটেশন এর প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতি শেষ হলে বাচ্চা ঠিকমতো শুনতে পারে। এই চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্য ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে হিয়ারিং এডে কাজ হবে কিনা।
চিকিৎসকরা জানান, এই প্রতিস্থাপনে সবচেয়ে বড় বাধা হল সমাজে প্রচলিত কয়েকটি ধারনা, যেমন এর ফলে কানের আরও ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু আসলেই ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টের ক্ষেত্রে কানে শোনার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না, তাছাড়া উপযুক্তভাবে অডিটরি রিহ্যাবিলিটেশন করা হলে বাচ্চা সুন্দরভাবে কথাও বলতে পারবে। তবে মনে রাখতে হবে উপযুক্ত চিকিৎসা ও উপযুক্ত শ্রবণ বিশেষজ্ঞকে দিয়েই যেন এই চিকিৎসা করানো হয়।
তাঁর পরামর্শ, রেডিওলজিস্ট ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ নেওয়ার দরকার হয় এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে। মনে রাখতে হবে, পুরো পদ্ধতির মাঝের অংশে রয়েছে ইএনটি স্পেশালিস্টের ভূমিকা। তার আগে পরে রয়েছে শ্রবণ বিশেষজ্ঞের ভূমিকা। আর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আরও বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার দরকার হয়।
সারা বিশ্বে এই ককলিয়ার তৈরি করে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানী। স্বাভাবিকভাবেই এটি অনেকটাই খরচ সাপেক্ষ।তবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহারে এটিই একমাত্র কানে যারা শুনতে পাননা তাদের কাছে মুশকিল আসান বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।