সঞ্জয় কাপরি, পূর্ব মেদিনীপুর: পূর্ব মেদিনীপুর এগরায় অবৈধ বাজি কারখানার বিস্ফোরণ কান্ডে রাত ৯টা নাগাদ কলকাতা থেকে বোম্ব স্কোয়াড ও সি আইডি টিম এসে পৌঁছায়। তাঁরা ঘটনা স্থলে নমুনা সংগ্রহ করছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে। এগরায় খাদিকুল গ্রামে অবৈধ বাজি কারখানায় ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ জন। এদের মধ্যে বেশীর ভাগ মহিলা বলে জানা গেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে. ঘটনাস্থলে গিয়ে জানান, “এখন পর্যন্ত পুলিশ ৯ টি মৃতদেহ উদ্ধা করেছে। সেই সঙ্গে আর কোনও মৃতদেহ আশেপাশে রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সন্ধান চালানো হচ্ছে”। এরই পাশাপাশি পুলিশ সুপার জানান, “এই ঘটনায় গুরুতর জখম ২ জনকে এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম-এ উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই দিনের বাজি কারখানায় মৃতেরা হলেন অম্বিকা মাইতি (স্বামী-সুরেশ), মাধবী বাগ (স্বামী-সঞ্জিৎ), শ্যামাশ্রী মাইতি (স্বামী-রবীন্দ্র), কবিতা বাগ (স্বামী-উমাপদ), মিনতি মাইতি (পিতা-শীতল), শক্তিপদ বাগ (পিতা-স্বর্গীয় অনন্ত), জয়ন্ত জানা (পিতা- স্বর্গীয় ভৈরব), বাপন মাইতি (পিতা-গৌরাঙ্গ)। তবে এক জনের নাম এখনও জানা যায়নি। এই দিন ঘটনার প্রতিবাদে গোটা এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দুপুর থেকেই দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রয়েছেন। মাঝে মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন উত্তেজিত গ্রামবাসীরা। প্রায় বছর ২০ ধরে এলাকায় দাপটের সঙ্গে বাজি কারখানা চালাচ্ছিল বছর পঞ্চাশের কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু। বিভিন্ন জায়গায় বাজি প্রতিযোগিতায় সেরার তালিকায় ভানু বিচরণ করত। গোটা বছর এলাকার সব থেকে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান গুলিতে বাজি প্রদর্শনী ছিল ভানুর নেশা।
তবে এভাবে অবৈধ বাজি কারখানা চালাতে গিয়ে আগেও দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ভানু।এইদিন অল্পের জন্য ভানু বেঁচে গিয়েছে বলেই প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী। এই দিন কারখানার পাশের রান্নাঘরে ভানু ছিল। বাজি বিস্ফোরণে তাঁর হাত ঝলসে গিয়েছে বলে খবর। তবে দুর্ঘটনার পরেই জমি টপকে স্বপরিবারে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার এদিন জানান, “এটি একটি অবৈধ বাজী কারখানা। আগেও ৩ থেকে ৪টি কেস হয়েছে এই কারখানার বিরুদ্ধে। একাধিক বার রেড করা হয়ে ছিল এখানে। তবে তারপরেও অভিযুক্ত ব্যক্তি নতুন করে কারখানা তৈরি করেছে”। পুলিশ সুপার আরও জানান, “অভিযুক্ত কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু বাগ কে গ্রেফতার করার জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া চলছে। এরপর তদন্ত যত এগোবে সেই অনুযায়ী আমরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব”। এরই পাশাপাশি তিনি জানান, “ইতিমধ্যে ফরেনসিক টিম বেরিয়ে এসেছে ঘটনা স্থলের উদ্দেশ্যে। তাঁরা ঘটনা স্থলে পৌঁছে তথ্য সংগ্রহ করবে। বাকী তদন্ত প্রক্রিয়া যা করা যায় আমরা করছি। আর কোনও দেহ রয়েছে কিনা আমরা খোঁজ চালাচ্ছি। আমরা উদ্ধার হওয়া দেহ গুলোকে ময়না তদন্তের জন্য পাঠাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাকী ডিটেলস গুলোও সংগ্রহ করা হচ্ছে।”