তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবীপ্রসাদ শেঠি (Devi Shetty)। বিশ্বের অন্যতম সেরা হৃদরোগ চিকিৎসাকেন্দ্র ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেসের প্রতিষ্ঠাতা। এবার কলকাতাতেও তিনি বানাতে চলেছেন হাসপাতাল। বৃহস্পতিবার নিউটাউনে সেই হাসপাতালেরই শিলান্যাস করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বর্তমানে দেবী শেঠির নাম জানে না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। হৃদয় কাঁটা ছেড়া করেও জয় করেছেন লাখ লাখ হৃদয়। ভারতের শীর্ষ স্থানীয় চিকিৎসকের মধ্য়ে ডা. দেবী শেঠি অত্য়ন্ত সুপরিচিত কার্ডিয়াক সার্জন। আর এহেন চিকিৎসক যে কোটিপতি হবেন তা নতুন করে বলে দিতে হবে না। কোটিপতি বললে ভুল হবে বরং তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ পাহাড় প্রমাণ বললেও অত্যুক্তি হয় না।

১৯৮৪ সালে হদরোগে আক্রান্ত হন মাদার টেরেসা। সে সময় তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন দেবী শেঠি। মাদার টেরেসার জীবনের শেষ পাঁচ বছর তিনিই ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলে তাঁর।
কোন ভাবনা থেকে নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস প্রতিষ্ঠার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল? স্মৃতিচারণা করতে দেবী শেঠি একবার একটি কলমে লিখেছিলেন, তাঁর অনুপ্রেরণা ছিলেন মাদার টেরেসা। গরিবদের জীবন বাঁচাতে একদা তিনি দেবী শেঠিকে আলাদা কোনও উপায় বের করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ২০০১ সালে তিনি নারায়ণ হৃদয়ালয় প্রতিষ্ঠা করেন দেবী শেঠি। পরবর্তীতে পরিণত হয় নারায়ণা হেলথ-এ। ৪৭টি মেডিক্যাল পরিষেবা রয়েছে এখানে। ১৫,০০০ কোটি টাকার বেশি বাজার মূলধন সহ ভারতের বৃহত্তম হাসপাতাল নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে একটি।
এমন বহু শিশুর হার্ট অপারেশন করেছেন যারা দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। এদের সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন শেঠি। এখনও দেবী শেঠি ও তাঁর নারায়ণা হৃদয়ালয় একদিকে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে ওপেন হার্ট সার্জারির মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। অন্যদিকে, এই হাসপাতালে এসে যে কোনও বয়সের হদরোগী যেন অর্থাভাবে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হয় লক্ষ্য রাখা হয় সেদিকেও।
সারা জীবন মানুষের সেবা করে গিয়েছেন। এখনও নিমগ্ন থাকেন মানুষের সেবাই। দেশের স্বাস্থ্য় সেবার তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর হাতে যেন রয়েছে জাদুর ছোঁয়া। তিনি হৃদয় ছুঁলেই সব যন্ত্রণা যেন মুহূর্তে লাঘব হয়। তাই তো আজও দেবী শেঠির একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে রাজি থাকেন বহু মান।। দক্ষিণ ভারতের কর্নাটকে জন্ম নেন দেবী শেঠি। ১৯৮২ সালে কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারিতে গ্র্য়াজুয়েশন পাশ করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে সার্জারির বিষয়ে লাভ করেন উচ্চতর ডিগ্রি। যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করেন দীর্ঘদিন। সেখানে থেকে লাভ বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন দেবী শেঠি।
১৯৮৯ সালে লন্ডনের উচ্চাভিলাষী চাকরির অফার পেয়েও ফিরে আসেন ভারতে। ডা. রায়ের সঙ্গে তিনি কলকাতায় গড়ে তোলেন ভারতের প্রথম হৃদরোগ চিকিৎসা হাসপাতাল বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টার। তবে ভারতীয়দের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ইউরোপিয়ানদের তুলনায় তিনগুণ বেশি হওয়ার এই একটি হাসপাতাল যথেষ্ট ছিল না। এর জন্য ডা. দেবী শেঠি ও ডা. রায় মিলে গড়ে তোলেন আরও তিনটি হৃদরোগ চিকিৎসাকেন্দ্র। বিএম বিড়লা হার্ট সেন্টার যাত্রার শুরুর অল্প দিনের মধ্যেই ভারতের শ্রেষ্ট হার্ট হাসপাতালে একটিতে পরিণত হয়।
ব্যাঙ্গালুরুতেও প্রতিষ্ঠান করেছেন মণিপাল হার্ট ফাউন্ডেশন। নারায়ণা হেলথের ৩০টির বেশি শাখা হাসপাতাল রয়েছে ভারত জুড়ে। ৭০০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, সাধ্যের মতো চিকিৎসা খরচ, চমৎকার স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য সকলের প্রশংসা জিতে নিয়েছে। ২০১৫ সালে আইপিও লঞ্চ করেছেন দেবী শেঠি। ভারতের অন্যতম ধনী মহিলা কিরণ মজুমদার শ-এরও তাঁর ব্যবসায় স্টক রয়েছে।
ডঃ শেঠি ভারতে প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার, পদ্মশ্রী (২০০৪) এবং পদ্মভূষণ (২০১২)-সহ অসংখ্য সম্মান পেয়েছেন। টাইম ম্যাগাজিনে স্বাস্থ্যসেবায় সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ জনের তালিকায় নাম তুলে নিয়েছেন তিনি। দেবী শেঠি ভারতের ধনীতম চিকিৎসকদের মধ্যে একজন। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ অন্তত ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ( ১.২ ডলার বিলিয়ন)।