মৎস্যজীবীদের আন্দোলনের জের! শেষ মুহূর্তে জুনপুটে ফ্লাইট ট্রায়াল বাতিল করল ডিআরডিও (DRDO)। ট্রায়াল আপাতত বন্ধ থাকছে। তিনদিন মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া বন্ধ রেখেও ফ্লাইট ট্রায়াল না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি। তাঁদের বক্তব্য, ফ্লাইট ট্রায়াল হল না। অথচ প্রথম দফায় তিনদিন তাঁদের জীবিকার্জন ব্যাহত হল। একইসঙ্গে বন্ধ রাখা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাজও।
বাম আমলে এই পূর্ব মেদিনীপুরেরই হরিপুরে প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যায়নি। তখন বাধা এসেছিল বিরোধী তৃণমূলের থেকে। হরিপুর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জুনপুটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন)-র ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাজ বন্ধের পিছনেও রয়েছে অধুনা শাসক তৃণমূলই।
বুধবার থেকে ডিআরডিও-র বিমান মহড়া (ফ্লাইট ট্রায়াল) হওয়ার কথা। সে জন্য প্রথম দফায় ১৯ জুলাই পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২৪-২৬ জুলাই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে জুনপুটে লঞ্চিং প্যাডের চারদিক টিন দিয়ে ঘেরা হচ্ছিল। কলকাতার এক ঠিকাদার সংস্থা কাজ করছিল। উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের দক্ষিণ দিকে ঘেরাটোপ হয়েও গিয়েছে। তার পরেই ঝামেলা।
অভিযোগ, ১০ জুলাই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক আমিন সোহেলের নেতৃত্বে মৎস্যজীবীরা গিয়ে ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। ঠিকাদারের লোকজন এলাকা ছাড়েন। তার পর থেকে সেখানে নজরদারি চালাচ্ছেন বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা। জেলা পুলিশের একটি সূত্র মানছে, ডিআরডিও লঞ্চিং প্যাডের কাছে কিছু কাজ করবে বলে প্রথমে জানালেও পরে জানিয়েছে, আপাতত কাজ বন্ধ। কারণ জানানো হয়নি। কাঁথি ১-এর বিডিও অমিতাভ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ডিআরডিও-র তরফে মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে, সাময়িকভাবে তারা কাজ বন্ধ রাখছে।’’
জুনপুট মৎস্যখটির সভাপতি শেখ নজু এবং সহকারী সম্পাদক জাহেদ আলির দাবি, মৎস্যজীবীরা ঠিকাদার সংস্থার লোকেদের আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে সমস্যা মেটেনি। তৃণমূল নেতা আমিন বলছেন, ‘‘অরাজনৈতিক ভাবে কয়েকটি মৎস্যজীবী সংগঠন, পরিবেশপ্রেমী এবং বিজ্ঞান কর্মীরা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের সমস্যা তুলে ধরে আন্দোলন করছেন। কাজ বন্ধ করার অভিযোগ ঠিক নয়।’’
জুনপুট কোস্টাল থানার ওসি প্রতিমা শ’ বায়েন বলেন, “আপাতত ফ্লাইট ট্রায়াল বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে ডিআরডিও’র পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়। এও জানানো হয়, পরবর্তী সময়ে পুলিস-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসে সবকিছু ঠিক করা হবে।” কাঁথি মহকুমা মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সভাপতি আমিন সোহেল বলেন,”এর আগেও এমন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। বার বার নিষেধাজ্ঞার জেরে মৎস্যজীবীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র গড়ার চেষ্টা এবং মৎস্যজীবীদের হয়রান করার প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।” ২৩ জুলাই এই ইস্যুতে এলাকায় সহস্রাধিক মৎস্যজীবীকে নিয়ে মশাল মিছিল বের করা হবে।