পল্লব হাজরা, বনগাঁ : উত্তর ২৪ পরগণার অন্তর্গত গোবরডাঙা একটি প্রাচীন জনপদ। আর গোবরডাঙা নাম মনে আসতে ভেসে ওঠে ইতিহাসের সাক্ষী গোবরডাঙা জমিদার বাড়ি (Durga Puja 2025)। হাতির পিঠের চড়ে খাজনা আদায় ছিল এই বাড়ির অন্যতম আভিজাত্য। হাতি আনা নেওয়ার জন্য সেই সময় এক প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছিল। যা এখনও দেখা যায় গোবরডাঙায়। স্থানীয় মানুষের কাছে যা পরিচিত সাড়ে তিন নম্বর প্লাটফর্ম।
প্রচলিত আছে স্বপ্নাদেশে দেবীকে পেয়েছিলেন তৎকালীন জমিদার খেলারাম মুখোপাধ্যায়। স্বপ্নে দেবী স্বয়ং জানান দেন যমুনা নদীতে রয়েছে কষ্ঠিপাথর সেই পাথর মন্দিরে এনে প্রতিষ্ঠিত করার। পরের দিন নদীতে ডুবে দিয়ে কষ্টিপাথর উদ্ধার করেন খেলারাম। পাথর কেটে তৈরি করেন প্রসন্নময়ী কালী।১৭৯২ সালে দেবী প্রতিষ্ঠিত হন জমিদার বাড়ির মন্দিরে। এরপর থেকেই শুরু হয় জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো।
মহালয় পরের দিন প্রতিপদে প্রসন্নময়ী দেবী দালানে ঘট স্থাপনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় দেবীর বোধন।প্রতিবছর প্রথা মেনে জন্মাষ্টমীর দিন বাবলা কাঠের কাঠামোয় পরে মাটির প্রলেপ। ষষ্ঠীতে দেবী দালানে নিয়ে আসা হয় প্রতিমা। সপ্তমীতে কালি মন্দির থেকে কলা বউ আনা হয় দেবী দালানে। মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় অস্ত্র। একসময় কামান দেগে পুজো শুরু হওয়ার কথা গ্রামবাসীদের জানান দেওয়া হলেও আজ সেই প্রথা আর নেই। শাক্ত মতে মহিষ, ভেড়া বলির রীতি থাকলে ১৯৯৭ সালের তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে চালকুমড়ো ও আখ বলি চলু হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী নিয়ম মেনে হয় পূজার্চনা। বছরের অন্যান্য দিন প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলে পুজোর দিনগুলি সাধারণ মানুষের জন্য অবারিত দ্বার। বহু মানুষ ভিড় জমান জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণে। দশমীর সন্ধ্যায় একসময় আকাশের তারা দেখে স্থির হতো প্রতিমা নীরঞ্জনের সময়। বাড়ি থেকে যমুনা নদী পর্যন্ত শোভাযাত্রায় সামিল হত জমিদার বাড়ির হাতি।