তিলোত্তমা কান্ডে আন্দোলন, মিছিল, রাত দখল নিয়ে কলকাতা সহ সারা বাংলা কার্যত এখন উত্তাল। সেই উত্তাল সময়ের মধ্যেই মা আসছেন (Durga Puja)। প্রতিবার মা এলে প্রকৃতি যেন সেজে ওঠে। শিউলি ফুলের গন্ধ, কাশ ফুলের শোভা আর নীলাভ আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ জানান দেয়, আর কয়েকটা দিন, তারপরেই সমস্ত মন খারাপ মুছিয়ে দিতে মা আসছেন। প্রকৃতি মা দুর্গাকে আগমন জানাতে ব্যস্ত। সেজে উঠেছে নিজের মতো করে। উৎসবের মেজাজে কেনাকাটা করছে মানুষ। কিন্তু কোথাও যেন একটা তাল কাটছে। পুজো আসার আগে যে অপেক্ষা, সেই ভালোবাসার অপেক্ষাতেও যেন একটা মন খারাপের দাগ। আর সেই মন খারাপের দাগ কিছুটা কমাতে দেবী দুর্গার আবাহনে ব্রতী হালিশহর বলাকা শিশু মহল।
বিজপুর বিধান সভা এলাকার কাঁচরাপাড়া এবং বাংলার ‘হাবেলিশহর’ যা এখন হালিশহর। এই অঞ্চল জুড়ে বেশ কিছু পুজো হয়, যার মধ্যে হালিশহর বলাকা শিশু মহলের পুজো (Durga Puja) অন্যতম। সাধক রামপ্রসাদের ভিটের সামনে দিয়ে বয়ে চলা ভাগিরথির পশ্চিমে হুগলী জেলা এবং পুবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষজন পুজোর কটা দিন ভিড় করেন এখানকার মণ্ডপে মন্ডপে । বলাকা শিশু মহল ক্লাবের অন্যতম সদস্য পাপন ঘোষ জানান, আমরা যারা বাঙালি বিশেষ করে যারা হিন্দু ঘরে জন্মেছি , দুর্গা পুজো (Durga Puja) আমাদের আবেগের আমাদের আবেগের উৎসব দুর্গাপুজো। শুধু বাংলাই নয় সারা দেশও নয় বিদেশেও দুর্গা পুজো নিয়ে উন্মাদনা দেখা যায়। তারা উৎসব পালন করেন। আমরাও তিলোত্তমা নিয়ে রাস্তায় নেমেছি, আমরাও চাই তিলোত্তমা দ্রুত বিচার পাক। আমরা দুটোই চাই উৎসবও হোক তিলোত্তমা সু বিচার পাক। গত ৩৩ বছর ধরে সাবেকিয়ানা বজায় রেখে পুজো করে আসছে বলাকা শিশু মহলের পুজো উদ্যক্তারা। এবার ৩৪ তম বর্ষে তাদের থিম এক ‘টুকরো পুরুলিয়া।’ মূলত পুরুলিয়ার শিল্পকলা, সেখানকার কৃষ্টি এসবই ফুটে উঠেছে তাদের মণ্ডপে। তিনি জানান, তাদের মণ্ডপটি তিনটি ভাগে দেখা যাবে। প্রথমে দেখা যাবে শ্রীকৃষ্ণের অশুভ শক্তিকে নাশ করার দৃশ্যপট। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে দেখা যাবে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় যে ভাসুকি নাগ দেখা গিয়েছিল সেরকম একটি দৃশ্যপট থাকছে। এরপর তৃতীয় পর্যায়ে থাকছে পুরুলিয়ার আলপনা গ্রাম আলপনা গ্রামের বাড়িগুলিতে যে রকম বিভিন্ন রকম দৃশ্য আঁকা থাকে ঠিক সেই রকমই থাকছে। মন্ডপের ভিতরে আসলে প্রত্যেক দর্শনার্থীরা ফিল করবেন যে তারা পুরুলিয়াতেই এসেছেন।
দীর্ঘ তিন মাস ধরে কাজ করে চলেছেন এখানকার শিল্পীরা। হাতে মাত্র আর কটা দিন, এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততায় শেষ মুহূর্তের কাজ করে চলেছেন শিল্পীরা। কেউ পুরুলিয়ার আলপনা গ্রামের মাটির দেওয়ালে আঁকছেন ত কেউ বিচুলি বেঁধে কিছু বানাচ্ছেন, আবার কাউকে দেখা যাচ্ছে বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় যে ভাসুকি নাগ দেখা গিয়েছিল তাতে রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন। শিল্পী মনোজ মজুমদার জানালেন, তিনি এক টুকরো পুরুলিয়া বানাচ্ছেন যেখানে পুরুলিয়ার ছৌ নাচ থেকে শুরু করে আলপনা গ্রাম থাকছে। ছৌ নাচে যেমন পালা করে দেখানো হয় তিনিও এখানে শ্রীকৃষ্ণের পালা করেই মন্ডপটি সাজাচ্ছেন। মণ্ডপটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই তৈরি করছেন , ব্যবহার করছেন গাছের ডাল, পুরনো পাতা, শুকিয়ে যাওয়া পাতা, ভুট্টার খোসা, মাটির ভার, তালপাতা, বিচুলি এছাড়াও আরো বহু রকম উপাদান দিয়েই তৈরি করছি এ বছরের এই মণ্ডপ।