পল্লব হাজরা, খড়দহ: বৈষ্ণব ধর্ম প্রবর্তনে ইতি হাসের পাতায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে শ্রীপাট খড়দার মেজ বাড়ির নাম। আনুমানিক ১৫২২ সালে এই অঞ্চলে কুঞ্জবাটিতে বসতি স্থাপন করেন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদ প্রভু নিত্যানন্দ। সেই সময় পুরন্দর পন্ডিত নিত্যানন্দ প্রভুকে ২৬ বিঘা জমি দান করেন । ১৫৩০ সালে নিজ গৃহে তিনি দশভূজা মাকে পুজো করেন কাত্যায়নী রূপে (Durga Puja)। আজও সেই প্রথা মেনে আসছে খড়দহ গোস্বামী পাড়ার মেজ বাড়ি।
উল্টো রথে হয় দেবীর কাঠামো পুজো। দেবীদালানে শিল্পীর নিপুণ ছোয়ায় গড়ে ওঠে প্রতিমা। ষষ্ঠীর বোধনে (Durga Puja) দেবী কাত্যায়নীকে বসান হয় সিংহাসনে।একচালায় দেবী দশভূজা ডানদিকে গণেশ ও বামদিকে কার্ত্তিক অবস্থান করলেও দেখা মেলে না লক্ষ্মী সরস্বতীর। পরিবর্তে দেখা যায় দেবীর দুই সখী জয়া বিজয়া। দেবীর বাহন এখানে ঘোড়া। নবপত্রিকায় পড়ানো হয় সাদা থান।
এই প্রসঙ্গে মেজ বাড়ি অন্যতম সদস্য নিত্যানন্দ প্রভুর চতুর্দশ বংশধর সরোজেন্দ্র মোহন গোস্বামী জানান কথিত আছে প্রভু নিত্যানন্দের হাতে উপহার স্বরূপ এক ব্যক্তি সাদা থান তুলে দেন। সেই থান স্বীকার করে নবপত্রিকায় তা পড়িয়ে সিঁদুরের রঙে রাঙিয়ে তোলেন। মহালয়ার আগে কৃষ্ণা নবমী তিথিতে মা চণ্ডী যান শ্যামের মন্দিরে। প্রতিপদে চণ্ডী বাড়ির কুলদেবতা শ্রীশ্রী রাধা শ্যামসুন্দর জিউর মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। দেবী আরাধনায় খুঁজে পাওয়া যায় বৈষ্ণব ও শাক্তের মিলবন্ধন। পুশুবলি না হলেও মন্ত্রের মধ্যে দিয়ে মাসকলাই বলি দেওয়া প্রথা চালু। কালিকা পুরান মতে হয় পুজো। বিশেষত্ব রয়েছেভোগ প্রসাদে।
প্রভু নিত্যানন্দ ছিলেন গৌড় প্রেমী। তাই মায়ের ভোগে থাকে গৌড় প্রিয় পদ। প্রাচীন সেই প্রথা আজও মেনে আসা হয়। পুজোর তিনদিন ১৬ রকমের পদে দেবীকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয় খিচুড়ি, বেগুনি, চচ্চড়ি, অন্ন, মুগঘন্ট, সুক্ত, মোচা, ডাল, পোস্ত, পুষ্পান্ন, ধোঁকা, ছানা, চাটনি, পরমান্ন ও মিষ্টি। দশমীতে মাকে দেয়া হয় পান্তা ভোগ। সাথে থাকে কচু শাক ও চালতার টক। দশমীর দিন সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন বাড়ির সদস্য। সিঁদুর খেলায় অংশ নিতে বহু দূরদূরান্ত থেকে আসেন সাধারণ মানুষ। একসময় গঙ্গা বক্ষে নৌকায় প্রতিমা নিরঞ্জন হলেও আজ এসেছে বদল। নৌকা ব্যবহার আর না হলেও গঙ্গার ঘাটে হয় বিসর্জন। বছরই চারটি দিন পরিবারে প্রতিটি সদস্য এক জায়গায় মিলিত হন। মাকে বিদায় জানিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয় ফের একটি বছরের।