পণের দাবিতে গৃহবধূ হত্যার অভিযোগ, স্বামী সহ গ্রেফতার ৫

সমীর সাহা, নদিয়া: পণের জন্য গৃহবধূ হত্যার অভিযোগে স্বামী সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার অভিযুক্ত পাঁচজনকেই নবদ্বীপ আদালতে তোলা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বিকালে নদিয়ার নবদ্বীপ থানার ফাঁসিতলা দক্ষিণচড়ার পুরুষশ্চরন মাঠ এলাকায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম রিম্পা হালদার (১৯)। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে মুর্শিদাবাদের লালবাগের রিম্পা হালদারের সঙ্গে বিয়ে হয় নবদ্বীপের রথিন হালদার ওরফে পাপাইয়ের। পাপাই এবং তাদের পরিবারের সকলেই রান্নার কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাদের দেড় বছরের একটি ছেলেও আছে।

মৃতার দাদা সাগর হালদার জানান, বোনের বিয়েতে দাবি মতো নগদ ২০ হাজার টাকা, খাট, আলমারি সহ বিভিন্ন দানসামগ্রী দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকে অতিরিক্ত আরও পনের জন্য রিম্পাকে প্রতিদিন শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করত শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

সোমবারও তাদের মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠে। অভিযোগ, দুপুর বেলায় মৃতার স্বামী রথিন ওরফে পাপাই শ্বশুরবাড়িতে ফোন করে বলে আপনাদের মেয়েকে নিয়ে যান। না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। ফের বিকেল ফোন করে বলে রিম্পা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

প্রতিবেশীরা জানায়, এদিন অশান্তি সহ্য করতে না পেরে রিম্পা তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের বলে আমি গলায় দড়ি দেব। এই বলে সবার সামনে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। ওই গৃহবধূকে কোন বাধা দেননি শ্বশুর বাড়ির লোকজন। কিছু সময় পর বন্ধ দরজা ভেঙে দেখতে পান রিম্পা গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে। তাঁকে উদ্ধার করে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।

এই খবর জানাজানি হতেই ক্ষিপ্ত জনতা চড়াও হয়ে প্রচণ্ড মারধর করে গৃহবধূর স্বামী রথিন হালদার, শ্বশুর রতন হালদার, শাশুড়ি বন্দনা হালদার, ননদ বাসন্তী হালদার এবং দিদি শাশুড়ি পাপিয়া রাজবংশীকে। নবদ্বীপ থানার পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সোমবার গভীর রাতে ওই গৃহবধূর দাদা সাগর হালদার নবদ্বীপ থানায় রিম্পার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ওই গৃহবধূকে মেরে ফেলার অভিযোগ করেন৷

ওই গৃহবধূর দাদা সাগর হালদার বলেন, ‘‘বিয়ের পর থেকেই অতিরিক্ত পনের জন্য শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাত স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন। ওদের দাবি মতো অনেক কিছুই দেওয়া হয়েছে। তবুও ওরা আমার বোনকে মেরে ফেলেছে। আমরা ওদের কঠিন শাস্তি চাই।’’ অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ওই গৃহবধূর স্বামী ওরফে পাপাইয়ের পুলিশ হেফাজত চেয়ে পাঁচ অভিযুক্তকেই নবদ্বীপ আদালতে তোলা হয়।