একটি হৃদয়বিদারক এবং অবিশ্বাস্য ঘটনা, যেখানে মানুষের সহানুভূতি, একতা এবং আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির (HAM Radio) শক্তি কার্যকরী হয়ে উঠল, তাতে বহু বছর পর একটি পরিবার পুনর্মিলিত হল। ওড়িশার নিখোঁজ কৃষক সাহেব সূর্য, যিনি শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন, তাকে অবশেষে তার পরিবারের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সাহেব সূর্যের এই দীর্ঘ যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর, যখন তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান এবং আর ফিরে আসেননি। তার অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর, তার পরিবার প্রচুর চেষ্টা চালায় তাকে খুঁজে বের করার জন্য – থানায় মামলা করা, বিজ্ঞাপন দেওয়া, কিন্তু কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি।
একের পর এক বছর চলে গেলেও, কোনো সন্ধান মেলেনি। অবশেষে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জ এলাকার স্থানীয় ছাত্রদের তীক্ষ্ণ নজর ও সহানুভূতির কারণে সূর্যকে পুনরায় তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হল। বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রথম সূর্যকে দেখতে পায় এবং লক্ষ্য করে, তিনি একমাত্র ভগবান জগন্নাথের ছবিতে সাড়া দিচ্ছিলেন। ছাত্ররা বুঝতে পারে যে তিনি সম্ভবত ওড়িশার হতে পারেন, এরপর তারা সমাজকর্মী সুশান্ত ঘোষকে খবর দেয়, যিনি তাৎক্ষণিকভাবে HAM রেডিও অপারেটরদের সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করেন।
পশ্চিমবঙ্গ রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস, সূর্যের পরিবারের খোঁজে এগিয়ে আসেন। ছবি প্রচারিত হয় HAM রেডিও অপারেটরদের মধ্যে, এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, সূর্যের ছেলে গুডপাক কুমারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। গুডপাক কুমার নিশ্চিত করেন যে, এটি তার বাবা, সূর্য, যিনি পাঁচ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন।
গুডপাক কুমার জানান, “আমার বাবা বধির ও বোবা ছিলেন, কিন্তু তিনি ডিমেনশিয়াতে ভুগলেও কৃষক হিসেবে ভালোভাবে জীবন পরিচালনা করতেন। ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান এবং আর ফিরে আসেননি। আমরা বহু থানায় নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছি, এমনকি বিজ্ঞাপনও দিয়েছি, কিন্তু কোনো খবর পাইনি।”

এই অবিশ্বাস্য পুনর্মিলনের পেছনে ছিল স্থানীয় ছাত্রদের তৎপরতা, পুলিশ অফিসারদের সহানুভূতি এবং HAM রেডিও অপারেটরদের অবিচল প্রচেষ্টা। তাদের সম্মিলিত উদ্যোগেই সূর্য তার পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। শুক্রবার, গুডপাক কুমার তার বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান, তাদের দীর্ঘকালীন অপেক্ষার অবসান ঘটে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ যে, একসঙ্গে কাজ করলে এবং আধুনিক যোগাযোগের শক্তি কাজে লাগিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়ালে, বিচ্ছিন্ন পরিবারের সদস্যদের পুনর্মিলন সম্ভব হয়। এই ঘটনা শুধু ওড়িশা নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি হৃদয়স্পর্শী বার্তা প্রদান করছে—যেখানে মানবিকতা, সহানুভূতি এবং প্রযুক্তির শক্তি মিলেমিশে এক পরিবারের আশা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে।