আবু আলী, ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। মোদির আমন্ত্রণপত্র বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। অন্যথায় রাজপথে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে দলটি। সোমবার হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। এসব প্রোগ্রামকে অতিথি হিসেবে বেশ কয়কজন রাষ্ট্রনেতা অংশগ্রহণ করছেন। অতিথিদের তালিকায় রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিশ্বের কাছে যার আরেক পরিচয় ‘গুজরাটের কসাই’। এ ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, এমন কাউকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা উচিত হবে না বা যার আগমন এদেশের মানুষকে আহত করবে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একজন মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে এবং হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার মতো নয়। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং সেখানে অন্যায়ভাবে মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্তে আমাদের হৃদয়ে রক্তপাত হয়।
এছাড়া কাশ্মীরে মুসলিম নির্যাতন এবং নাগরিকত্ব আইনসহ প্রতিটি মুসলিমবিরোধী সিদ্ধান্তের মূলহোতা এই নরেন্দ্র মোদি। বছর খানেক আগে তার অনুসারীদের হাতে দিল্লিতে মুসলমানদের রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদের মিনার ভেঙে সেখানে হিন্দুত্ববাদী গেরুয়া পতাকা টানানো হয়েছে।’
এসময় তিনি বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের নামে আসামে লাখো মুসলমানকে বাংলাদেশি অভিহিত করে অনেকটা বন্দী করে রাখা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার মুসলমানদেরও অনিরাপদ অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একাধিকবার নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদেরকে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী অভিহিত করে তাদেরকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে না দিলে ভারতের মানুষেরা চাকরি পাচ্ছে না বলে উস্কানি দিয়েছে। আজ ভারতের মুসলমানদের মিথ্যা ও ঠুনকো অজুহাতে প্রকাশ্য রাজপথে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে মোদি সরকারের পরোক্ষ ইশারায়।’
হেফাজত নেতা বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ও বঞ্চনার তালিকাও বেশ দীর্ঘ। গঙ্গার পানিচুক্তি যে প্রত্যাশার পরিবেশ তৈরি করেছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি। তিস্তা নদীর পানি বণ্টনচুক্তি পেছাতে পেছাতে এখন তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে।’
জুনায়েদ আল হাবীব আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে নরেন্দ্র মোদির মতো একজন ব্যক্তি আসুক এটা আমরা চাই না। আমরা দেশের অধিকাংশ মানুষের সেন্টিমেন্টের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিকট নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণ বাতিলের আহ্বান জানাই।’