মথুরা লাঠমার হোলি রঙ, উল্লাস ও ভক্তদের ঢল
বরসানার ঐতিহ্যবাহী লাঠমার হোলি (Holi Celebration) এবারও তার নিজস্ব মহিমায় উদযাপিত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও পর্যটকের উপস্থিতিতে পুরো বরসানা রঙের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে। নারীরা ঘোমটার আড়াল থেকে লাঠি বর্ষণ করেন, আর পুরুষরা রঙ ও গুলাল ছিটিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন।

এবারের উৎসবে বরসানার তিন কিলোমিটার দীর্ঘ পথ ভক্তদের ভিড়ে ঠাসা ছিল। এত বিশাল জনসমাগম সামাল দিতে পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
লাঠমার হোলির আবেগ ও উচ্ছ্বাস
বরসানার লাঠমার হোলি শুধু রঙের উৎসব নয়, এটি রাধা-কৃষ্ণের চিরন্তন প্রেমের এক অনন্য প্রতিফলন। উৎসবের দিন বরসানার হুরিয়ারিনরা লাঠি হাতে তুলে নেন, আর নন্দগাঁওয়ের হুরিয়ারা ঢাল নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। এই অনন্য হোলি উৎসবে প্রত্যেক মুহূর্ত আনন্দ ও উদ্দীপনায় ভরা থাকে। চারদিকে উড়তে থাকে রঙ, বাজতে থাকে ঢোল-নগাড়া, আর ভক্তরা উল্লাসে নাচে-গানে মেতে ওঠেন।
নন্দগাঁওয়ের হোলি: পরবর্তী অধ্যায়
বরসানার লাঠমার হোলির পরদিন নন্দগাঁওতে হোলি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের দিন বরসানার হুরিয়ারদের পক্ষ থেকে বন্ধুরা নন্দগাঁওয়ে গিয়ে হোলি খেলার আমন্ত্রণ জানান। এ খবর পেয়ে নন্দগাঁওয়ের পুরুষরা তাদের ঢাল তৈরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন।
শুক্রবার সকালে নন্দগাঁওয়ে পৌঁছান লক্ষ লক্ষ ভক্ত। সেখানে রাধার সখীরা আমন্ত্রণপত্র হাতে নিয়ে উপস্থিত হন, যা দেখে নন্দগাঁওয়ে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়। নন্দ ভবনকে আলোকসজ্জায় সুসজ্জিত করা হয়, আর পুরো এলাকা হোলির আমেজে ভরে ওঠে।
হোলির আমন্ত্রণপত্র ও ঐতিহ্যবাহী প্রস্তুতি
হোলির আমন্ত্রণপত্র নিয়ে বরসানার রাধা দাসী সখী ও অন্যান্য সখীরা নন্দগাঁওয়ে পৌঁছান। সেখানে তারা ফুল ও গুলাল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। তেসু ফুল থেকে তৈরি রঙ উৎসবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়, যা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এক অনন্য রঙিন পরিবেশ সৃষ্টি করে।
হোলির অন্যতম আকর্ষণ হলো রাধাবাসির সঙ্গীত ও নৃত্য। নন্দ ভবনে ঢোল ও তূরী বাজিয়ে রাধাবাসিরা হোলির আমন্ত্রণ জানায়, এরপর শুরু হয় রসিয়া গান ও নৃত্যপর্ব। বিভিন্ন বিখ্যাত সংগীতজ্ঞরা হোলির রসিয়া পরিবেশন করেন, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
রাঙ্গিলি গলিতে হোলির মহোৎসব
বরসানার মন্দির সিঁড়ি থেকে রাঙ্গিলি গলিতে পৌঁছানোর পরই শুরু হয় লাঠিমার হোলির প্রধান আকর্ষণ। নন্দগাঁওয়ের হুরিয়াররা বরসানার হুরিয়ারিনদের লাঠির আঘাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন, আর উভয় পক্ষই আনন্দে মেতে ওঠে। এই ঐতিহ্যবাহী রীতির মাধ্যমে কৃষ্ণ ও রাধার প্রেমের প্রতীকী চিত্র তুলে ধরা হয়।
এ বছরের হোলিতে ভক্তদের আগমন সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ঐতিহাসিক লাঠমার হোলি প্রত্যক্ষ করেন এবং অংশগ্রহণ করেন। বরসানার আকাশ রঙের আলোয় রঙিন হয়ে ওঠে, আর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে হোলির আনন্দ।