Indian Defence: ‘জাতীয় প্রয়োজন’ নাকি কৌশলগত ঝুঁকি? লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি পুনরুজ্জীবনে ‘চিকেনস নেক’ সঙ্কটে ভারত

বাংলাদেশের লালমনিরহাট বিমানঘাঁটিতে একটি বিশাল হ্যাঙ্গার নির্মাণের অগ্রগতি এবং সেখানে সম্ভাব্য যুদ্ধবিমান মোতায়েনের প্রস্তুতি ভারতের ( Indian Defence) কৌশলগত নিরাপত্তা মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই বিমানঘাঁটিটি ভারতের সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর বা ‘চিকেনস নেক’-এর মাত্র ২০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের (MEA) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি পরিদর্শনের ঘটনা নয়াদিল্লির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যারা সংবেদনশীল এই সীমান্ত এলাকার কার্যকলাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

কৌশলগত অবস্থানের গুরুত্ব

লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হরিভাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত এই বিমানঘাঁটিটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সংযোগকারী একমাত্র করিডোর শিলিগুড়ি করিডোরের অত্যন্ত সন্নিকটে। এটি জাতীয় নিরাপত্তা এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সংযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) সূত্র অনুযায়ী, বিমানঘাঁটির পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত নতুন হ্যাঙ্গারটি পূর্বের জল্পনাকে আরও জোরালো করেছে যে, খুব শীঘ্রই এখানে দেশের পুরনো জে-৭ বিমানের বহরের পরিবর্তে আধুনিক যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলির তথ্য অনুসারে, নির্মাণাধীন এই হ্যাঙ্গারটি প্রায় ১০ থেকে ১২টি যুদ্ধবিমান রাখার জন্য যথেষ্ট বড়।

যুদ্ধবিমান অধিগ্রহণ এবং চীনা সম্পৃক্ততার জল্পনা

জেনারেল জামানের লালমনিরহাট এবং ঠাকুরগাঁও উভয় বিমানঘাঁটি পরিদর্শনের সময়ই এমন খবর সামনে এসেছে যে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী অন্তত ২০টি চীনা তৈরি J-10CE যুদ্ধবিমান ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তিতে কেনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও, ১৬টি JF-17 ব্লক III যুদ্ধবিমান অধিগ্রহণের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যা চীন এবং পাকিস্তান যৌথভাবে তৈরি করেছে। এই বিমানগুলি সরাসরি চীন বা পাকিস্তান কার কাছ থেকে সরবরাহ করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।যদিও গত বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযান অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার (বর্তমানে মেজর জেনারেল) মোহাম্মদ নাজিম-উদ-দৌলা দাবি করেছিলেন যে বিমানঘাঁটি পুনরুদ্ধারে “চীনা সম্পৃক্ততার কোনও তথ্য নেই” এবং “কোনও বিদেশী সত্তাকে” এটি পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না, তবুও ভারতীয় প্রতিরক্ষা মহল উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, চীন বা পাকিস্তান থেকে কেনা অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলি শেষ পর্যন্ত এই ধরনের কৌশলগত স্থানে মোতায়েন করা হতে পারে, যা ভারতের নিরাপত্তার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

বিমানঘাঁটির ইতিহাস ও পুনরুজ্জীবন

লালমনিরহাট বিমানঘাঁটিটি ১,১৬৬ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এতে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে। ১৯৩১ সালের এই ঘাঁটিটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ব্যবহার করেছিল, কিন্তু পরবর্তী কয়েক দশক এটি পরিত্যক্ত ছিল।

২০২৫ সালের মে মাসে ব্রিগেডিয়ার নাজিম-উদ-দৌলা জানিয়েছিলেন যে, “বিমান চলাচল ও মহাকাশ বিশ্ববিদ্যালয়”-সহ জাতীয় প্রয়োজনে এই বিমানঘাঁটিটি পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। প্রায় ছয় মাস আগে হ্যাঙ্গারের কাজ শুরু হয়েছে এবং বর্তমানে এর ছাদ সম্পন্ন করার দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, বিমানঘাঁটির সুরক্ষার জন্য পাশে একটি নতুন কংক্রিটের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজও শুরু হবে বলে জানা গেছে।

ইতিমধ্যে, প্রায় ৫৫০ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত ঠাকুরগাঁও বিমানঘাঁটির চারপাশে একটি ঘের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এই বিমানঘাঁটিতেও ১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অব্যবহৃত রানওয়ে রয়েছে।

নয়াদিল্লির উদ্বেগ

ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, শিলিগুড়ি করিডোরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চলের এত কাছে যুদ্ধবিমান মোতায়েনের জন্য একটি সুবিশাল সামরিক পরিকাঠামো নির্মাণ অত্যন্ত সংবেদনশীল। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ চীনা সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করলেও, চীনা অস্ত্রশস্ত্রের ব্যাপক অধিগ্রহণ এবং কৌশলগত অবস্থানে সামরিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা এবং উত্তর-পূর্ব সংযোগের সুরক্ষার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Exit mobile version