উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, নির্মাণসামগ্রী-সহ যাবতীয় উপকরণের জোগানে টান পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, রাজ্যজুড়ে ১১-১৩ সেপ্টেম্বর টানা ৭২ ঘণ্টার ট্রাক ধর্মঘটের(strike) ডাক দেওয়া হয়েছে। ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ছোট-বড়-মাঝারি ট্রাকচালকদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। প্রশাসনের মদতে সরকারি নিয়ম মেনে চলা ট্রাকের চালক-খালাসির উপর রাস্তায় ধারাবাহিকভাবে অত্যাচার চলে।
অভিযোগ, এক্ষেত্রে বাংলার সর্বত্র মুখ্য ভূমিকা নিচ্ছে সিভিকরা। আইনি সংস্থান না থাকলেও প্রতিদিন রাজ্য ও জাতীয় সড়কের উপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে মোটা টাকা ‘ঘুষ’ নেওয়ার মূল কান্ডারি হিসেবে এই সিভিকদের দায়ী করছে ট্রাক চালকদের সংগঠন । তাঁদের মূল অভিযোগ, ওভারলোড গাড়ি ‘বাড়তি টাকা’ দিয়ে পুলিশি পাহারায় গোটা রাজ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর আন্ডারলোড গাড়িগুলিকে একাধিকবার ওয়েব্রিজে (কাঁটা) ঢুকিয়ে ২৩৬ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। তাঁদের দাবি, মাল লোডিংয়ের সময় স্থানীয় কাঁটায় তা ওজন করিয়ে গাড়িতে তোলা হয়। এক্ষেত্রে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ পড়ে। অথচ সরকারি ওয়েব্রিজে ওজন করাতে ২৩৬ টাকা কেন দিতে হবে, প্রশ্ন ট্রাকমালিকদের। এক্ষেত্রে ২০০ টাকা ভাড়া। ৩৬ টাকা দিতে হয় জিএসটি খাতে।
সম্প্রতি মহম্মদবাজারের খয়রাকুড়িতে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ওয়েব্রিজ চালু করেছে রাজ্য প্রশাসন। রাস্তায় যাওয়া সব গাড়িকে বাধ্যতামূলকভাবে সেই ওয়েব্রিজের ভিতর দিয়ে যেতে হত। আন্ডারলোড ট্রাককেও পণ্য পরিবহণের জন্য খাতায় কলমে ২৩৬ টাকা দিতে হত। জেলা ট্রাক ও টিপার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এই আদায়কে অবৈধ দাবি করে তা বন্ধ করে দেয়। কারণ তাঁদের দাবি, ওই ওয়েব্রিজে ঘুঘু বাসা বেঁধেছে। কিছু ট্রাকচালক বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে রফা করে রাতের অন্ধকারে ওভারলোডেড গাড়ি পার করছে। আশপাশের জেলা এমনকী জেলার অন্যত্র এই টোল প্লাজা না থাকায় মার খেতে হচ্ছে ওই রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া ট্রাকমালিকদের।
সূত্রের দাবি, ওয়েব্রিজ পরিচালনার বরাত থার্ড পার্টিকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেদারে লুট চলছে বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের। তার ফলে রাজ্য সরকারের বিপুল অঙ্কের রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে। একইভাবে মোটর ভেহিকেল ইন্সপেক্টর, বিএলএলআরও, পুলিশ-সহ একাধিক সরকারি দফতরের অফিসারদের একটি অংশ ফুলেফেঁপে উঠছেন। সব মিলিয়ে ওভারলোড নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে প্রশাসনে।