যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক অশান্তি (Jadavpur University Issue) রাজ্য রাজনীতির একটি নতুন মাপকাঠি তৈরি করেছে, যা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, বরং রাজ্য রাজনীতির পক্ষে বড় একটি কলঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই বারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর মন্তব্য সবার নজর কেড়েছে। বৃহস্পতিবার বারাকপুর পুরসভার তরফে ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের সামনে তীব্র ভাষায় বলেন, “আমাদের কর্মীরা ২ মিনিটে উগ্র হতে পারে, তবে দল শেখায়নি বিরোধীদের মারতে।”
গত শনিবার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআই (স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া)-এর অশান্তির ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এসএফআইয়ের হামলায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ি আটকে দেয়ার অভিযোগ, সেই সঙ্গে এক ছাত্র আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনা রাজ্য রাজনীতির নকশায় নতুন আলো ফেলেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে মুখোমুখি হয়ে উঠেছে তীব্র সমালোচনা এবং পাল্টা-পাল্টি হুঁশিয়ারি।
তৃণমূলের মদন মিত্র, সৌগত রায় ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর, রাজ চক্রবর্তী বলেন, “২ মিনিট লাগবে উগ্র হতে”, একদিকে যেমন তৃণমূলের শক্তিশালী নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশিত হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে, সিপিএমের বিরুদ্ধে তাদের পুরনো সহিংস রাজনীতি নিয়ে সরব হচ্ছেন রাজ। তিনি বলেন, “যদি সিপিএমের আমলে এই ঘটনা ঘটতো, তবে যারা এটা করতো, তাদের খালে পাওয়া যেত।” রাজের এই মন্তব্য রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের এক নতুন দিক উন্মোচন করছে, যেখানে তিনি সিপিএমের অতীতের সহিংসতাকে তীব্রভাবে নিন্দা করেছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
এই মন্তব্যের মাধ্যমে রাজ সিপিএমকে একের পর এক আক্রমণ করেছেন, বিশেষত তাদের অহংকার এবং সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে। তাঁর মতে, সিপিএমই এমন রাজনৈতিক দল ছিল যারা মানুষের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করেছে এবং বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার জন্য সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছিল। তিনি বলেন, “আমাদের দলের আদর্শ শেখায় না বিরোধীদের মারতে, এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমরা সেটা সমর্থন করি না।”
তৃণমূলের নেতারা বারবার এই মন্তব্যের মাধ্যমে সিপিএমের অতীত সহিংসতা এবং রাজনীতির বিরোধিতা করছেন। রাজের কথায়, “যদি এই ঘটনা সিপিএমের আমলে ঘটতো, তাহলে তারা নিজেদের দমন-পীড়নকে আরও প্রগাঢ় করতো।” পাশাপাশি, রাজ চক্রবর্তী বারাকপুরের ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর যে অরাজকতা ও সন্ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা উল্লেখ করে বলেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর সেই পরিস্থিতি আর নেই। সিপিএমের পতনকে তারকা বিধায়ক রাজ একটি শিক্ষা হিসেবে তুলে ধরছেন, যেখানে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।
অবশ্য, রাজ্য রাজনীতির এই বিতর্ক তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে আরও গভীর সংকট সৃষ্টি করছে। এই ঘটনাগুলির মাধ্যমে রাজ্য রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যেখানে সিপিএমের পুরনো দিনগুলো এবং তৃণমূলের সহিষ্ণু রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে, রাজনৈতিক দিক থেকে, এই ধরনের হুঁশিয়ারি একেবারেই ইতিবাচক নয়, বরং এটি পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে, যা রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
যদিও, যাদবপুরের এই অশান্তি তৃণমূল এবং সিপিএমের মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক সংঘর্ষের চিত্র তুলে ধরছে, যা রাজ্য রাজনীতির গতিপথে নতুন দিক নির্দেশ করতে পারে।