পল্লব হাজরা, বরানগর: বাম নেতা সৃজন ভট্টাচার্যের ব্রিগেডের একটি ছবিকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র শোরগোল শুরু হয়েছে। ছবিতে সৃজনের পাশে এক মহিলাকে ‘পাক চর জ্যোতি মালহোত্রা’ (Jyoti Malhotra) বলে দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও, সৃজন ভট্টাচার্য ছবিটিকে বিকৃত বলে দাবি করে কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার অভিযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছবিটি বিকৃত করা হয়েছে।
তবে এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন বরানগরের বাসিন্দা পূর্বাদ্রি পোদ্দার। বামপন্থী ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত পূর্বাদ্রি দাবি করেছেন, বাম নেতার পাশে আসলে তারই ছবি ছিল। সৃজন ভট্টাচার্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার ছবি বিকৃত করে জ্যোতি মালহোত্রার মুখ বসিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। সোমবার এই বিকৃত ছবিটি দেখে রীতিমতো হতভম্ভ হয়ে যান পূর্বাদ্রি। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বরানগর থানার সাইবার সেলে যোগাযোগ করেন এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পূর্বাদ্রির অভিযোগ, গত সোমবার আলিপ সমাদ্দার নামে এক ব্যক্তি তার আসল ছবিকে বিকৃত করে সৃজন ভট্টাচার্যের পাশে জ্যোতি মালহোত্রার মুখ বসিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। আসল ছবিটি চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ব্রিগেডে সৃজনের পাশে দাঁড়িয়ে তুলেছিলেন তিনি এবং পরে সেটি পোস্টও করেন। পূর্বাদ্রি এই ঘটনার পিছনে বিরোধীদের মদত থাকার অভিযোগ তুলেছেন। তার মতে, বামেদের কালিমালিপ্ত করার উদ্দেশ্যেই এই কুকীর্তি ঘটানো হয়েছে।
এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়েছেন বরানগর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর সীমা দাস, যিনি সম্পর্কে পূর্বাদ্রির মা। সীমা দেবীর অভিযোগ, এটি বিরোধীদের চক্রান্ত। সৃজনের মতো একজন নেতার গায়ে কাদা ছিটানোর জন্যই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে এবং কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত সে বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
তবে এই ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
- সাইবার অপপ্রচারের ঝুঁকি: এই ঘটনা ডিজিটাল যুগে সাইবার অপপ্রচার এবং ফেক নিউজের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে সহজেই ছবি বিকৃত করে ভুল তথ্য ছড়ানো যায়, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ধরনের বিকৃত ছবি ব্যবহার করে জনমতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা একটি গুরুতর হুমকি।
- বামপন্থীদের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা: পূর্বাদ্রি এবং তার মায়ের অভিযোগ অনুযায়ী, এই ঘটনা বামপন্থীদের, বিশেষত সৃজন ভট্টাচার্যের মতো তরুণ ও উদীয়মান বাম নেতার ভাবমূর্তি নষ্ট করার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার একটি কৌশল হতে পারে।
- বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা: এই ঘটনায় বিরোধীদের মদতের অভিযোগ উঠেছে। যদি তদন্তে এটি প্রমাণিত হয়, তবে এটি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন করে অসুস্থ প্রতিযোগিতার জন্ম দেবে। রাজনৈতিক বিতর্কের সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এই ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
- পুলিশের ভূমিকা: পুলিশের তদন্ত এই ঘটনায় কারা জড়িত এবং তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল তা উন্মোচন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নিরপেক্ষ এবং দ্রুত তদন্ত জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানো এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে কঠোর আইন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। এই ঘটনা শুধু একটি রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, এটি ডিজিটাল যুগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুরক্ষার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত বহন করে।










