দু’দিন আগেও তিনি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্নেহধন্য’। তবে আচমকাই ঘুরে গেল চাকা। সন্দীপ ঘোষের( Sandeep Ghosh ) আমলে আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করতে গতকালই চার সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আর এরই মধ্যে আজ সকালেই সন্দীপের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করল পুলিশ। এর আগে গতরাতে স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছিল, স্বামী বিবেকানন্দ রাজ্য পুলিশ অ্যাকাডেমির ইনস্পেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ তথা আইপিএস অফিসার প্রণব কুমারের নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়েছে সন্দীপের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। সেই দলে আছেন মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি ওয়াকার রেজা, সিআইডির ডিআইজি সোমা দাস মিত্র এবং কলকাতা পুলিশের (সেন্ট্রাল) ডেপুটি কমিশনার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। এক মাসের রাজ্য সরকারের কাছে প্রথম রিপোর্ট জমা দেওয়ার এই দলের।
উল্লেখ্য, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল গোটা শহর, গোটা রাজ্য। আরজি করে পড়ুয়া খুনের ঘটনার সময় প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন এই সন্দীপ ঘোষ। পরে চাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এবং মিডিয়াকে ডেকে তিনি যেদিন প্রিন্সিপাল পদ থেকে পদত্যাগ করেন, সেদিন তিনি বারংবার নির্যাতিতা সেই ডাক্তারের নাম নেন। তাঁর সেই বক্তব্য লাইভ টিভিতে সম্প্রচারিত হয়েছিল। এই আবহে নির্যাতিতার নাম প্রকাশের অভিযোগে সন্দীপের বিরুদ্ধে অবশেষে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হল। এদিকে আজও সিবিআই-এর তরফ থেকে তলব করা হয়েছে সন্দীপ ঘোষকে। এর আগে গত ৪ দিন ধরে টানা জেরা করা হয়েছে সন্দীপকে। সেখানে সন্দীপের অনেক বয়ানে অসঙ্গতি মিলছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
এর আগে গত ২০২৩ সালে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর প্রাক্তন সহকর্মী আখতার আলি। একবছর আগে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়োগ বোর্ডের ডেপুটি সুপার থাকাকালীন রাজ্যের ভিজিলেন্স কমিশনকে একটি সুদীর্ঘ চিঠির মাধ্যমে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন আখতার আলি। এর আগে আরজ কর মেডিক্যাল হাসপাতালের ডেপুটি সুপারে থাকাকালীন সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে কাজ করেছিলেন আখতার আলি। আখতার আলি কী কী অভিযোগ করেছিলেন? তাঁর দাবি ছিল, বড় অঙ্কের বরাতকে ছোট ছোট বরাতে ভেঙে অনলাইন টেন্ডার এড়িয়ে পছন্দের সংস্থাকে বরাত দিতেন সন্দীপ ঘোষ। খারাপ গুণমানের ওষুধের অর্ডার দিয়ে সেই সংস্থাকে লাভবান করতেন এবং পরে সেই সংস্থা থেকে কমিশন নেওয়া হত। এদিকে কোভিড ফান্ড ব্যবহার করে চেয়ার-সোফা-আসবাব কেনা হত বলেও অভিযোগ। পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসা-বর্জ্য মোটা টাকার বিনিময়ে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে পাচার করে দেওয়া হত বলে দাবি।
২০২৩-এর ১৪ জুলাই রাজ্য ভিজিলেন্স কমিশনে চিঠি দিয়েছিলেন আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। এই বিষয়ে আখতার আলি সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি অভিযোগ করার পরে ভিজিলেন্স কমিশন কয়েক বার আমাকে ডেকেছিল। এরপর আমি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে বদলি হয়ে যাই। এদিকে সন্দীপ ঘোষও বদলি হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদে। তবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওঁর বদলির অর্ডার বাতিল হয়ে যায়।’