Berhampore Girls College: কর্মমুখী ফ্রি কোর্স চালু করে বিকল্প আয়ের দিশা বহরমপুর গার্লস কলেজের

বহরমপুর গার্লস কলেজ (Berhampore Girls College)- র বাংলা বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করার পর চাকরির লড়াইয়ে লড়বার সাথে সাথে ছাত্রীরা যাতে নিজেদের জন্য বিকল্প আয় খুঁজে নিতে পারে, সেই কথা মাথায় রেখে ছাত্রীদের জন্য কর্মমুখী ফ্রি কোর্স চালু করেছেন তারা। তবে কোর্সটি ফ্রি হলেও এই কোর্স শেষে কলেজ ছাত্রীদের দেওয়া হবে শংসাপত্র‌ও। আর এই শংসাপত্র তাদের সামনে খুলে দেবে একাধিক সম্ভাবনা।

 

সঙ্গীতা চ্যাটার্জী, বহরমপুর :  এক অদ্ভুত আঁধার নেমে এসেছে আজ! বর্তমান সময়ে শিক্ষিত মানুষের পরিসংখ্যান যে হারে বাড়ছে, চাকরির হার তার সমানুপাতিক নয়! যে কারণে এই প্রজন্মের মধ্যে এক অংশের মানুষ হতাশায় ভুগছেন আর অন্য অংশের মানুষ অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে নিজেরাই নিজেদের জন্য আলোক বৃত্ত তৈরি করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। চাকরির আশায় বসে না থেকে তারা খুঁজছেন বিকল্প পথ,তাই স্বাধীন ব্যবসা করার কথা ভাবছেন। তাই হয়ত মাঝে মধ্যেই তাএখন শোনা যায় এম এ, বি এড পাশ করেও কেউ ফুড স্টল খুলেছেন তো কেউ হয়েছেন মেকআপ আর্টিস্ট। আর এঁরাই আবার হয়ে উঠছেন হতাশাগ্রস্থ মানুষের চোখে অনুপ্রেরণা।

তবে ব্যবসার বাইরেও শিক্ষাকে কর্মমুখী করে তুললে যে বিকল্প ভাবে রোজগার করা সম্ভব তা উপলব্ধি করেছিলেন, বহরমপুর গার্লস কলেজ(Berhampore Girls College)-র অধ্যক্ষ ডঃ হেনা সিনহা ও বাংলা বিভাগের‌ বিভাগীয় প্রধান ডঃ মধু মিত্র। বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তার পাশ করার পর চাকরির লড়াইয়ে লড়বার সাথে সাথে ছাত্রীরা যাতে নিজেদের জন্য বিকল্প আয় খুঁজে নিতে পারে, সেই কথা মাথায় রেখে ছাত্রীদের জন্য কর্মমুখী ফ্রি কোর্স চালু করেছেন তারা। তবে কোর্সটি ফ্রি হলেও এই কোর্স শেষে কলেজ ছাত্রীদের দেওয়া হবে শংসাপত্র‌ও। আর এই শংসাপত্র তাদের সামনে খুলে দেবে একাধিক সম্ভাবনা।

কী কী আছে এই কোর্সে?

এই কোর্সে কন্টেন্ট রাইটিং থেকে শুরু করে নিউজ রিডিং, অ্যাকারিং থেকে শুরু করে বেসিক কম্পিউটার লিটারেসি স্কিলস শেখাবেন বহরমপুর গার্লস কলেজের (Berhampore Girls College) স্বনামধন্য প্রফেসররা, একই সাথে গার্লস কলেজের বাংলা বিভাগের যে সমস্ত ছাত্রীরা সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে মিডিয়া লাইনে প্রতিষ্ঠিত তাদেরকে পর্যন্ত এই কোর্সে পাঠদানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। গত ১০ ই জানুয়ারি থেকে বহরমপুর গার্লস কলেজে এই কোর্স চালু করা হয়েছে।

এই অ্যাড অন কোর্স করে ছাত্রীদের প্রতিক্রিয়া কী? তারা কি আদৌ উপকৃত হচ্ছে?

এই প্রসঙ্গে গার্লস কলেজের (Berhampore Girls College) বাংলা বিভাগের এক ছাত্রী মধুঋতু সিং বলে,“এই কোর্সটা করতে ভীষণ ভালো লাগছে, অনেক কিছু শিখতে পারছি। আমাদের পাঠ্য বিষয় ছাড়াও এমন বিষয় যেগুলো নিয়ে হয়তো সচরাচর ভাবা হয় না বা মাথায় আসলেও হয়তো লেখালেখি করা হয় না সেগুলো নিয়ে খানিকটা চর্চা করছি। আমাদের নিজস্ব ভাবনায় যে ভুল ত্রুটি গুলো রয়েছে সেগুলো স্যার‌ ও ম্যামরা আমাদের শুধরে দিচ্ছেন।” বাংলা বিভাগের আরেক ছাত্রী কঙ্কনা চন্দ্রের কথায়,“ এই কোর্সটা আমাদের কাছে মূল্যাতীত।কন্টেন্ট রাইটিং,নিউজ রিপোর্টিং,অ্যাংকারিং এর মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছি এই ক্লাসগুলোর মধ্য দিয়ে।”

এদিকে কোয়েল,দেবদত্তা,অনিষা,কুলসমা এবং অঙ্কিতা- রা জানাল, এই কোর্স তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুন। তাদের কথায়,কোর্সের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোতে এই কোর্সটির ফলে যেমন লাভবান হওয়া যাবে তেমনি পরবর্তী- কালে তাদের চাকরির ইন্টারভিউ ও বিভিন্ন জায়গায় মানুষের সামনে নিজেদের প্রপার ওয়েতে প্রেজেন্ট করতেও হেল্প করবে এই কোর্স। কারণ তাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে ভিতর থেকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে এই কোর্স। বাংলা বিভাগের এক ছাত্রী অনন্যা দত্ত আবার মনে করে এই কোর্সটি করে নিজের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে সে,“এই ক্লাসগুলো করে আমার বেশ লাভ‌ই হয়েছে, আগে আমি কোন কথা বলার আগে দুবার ভাবতাম বা কথা বলার সময় আমার একটা আড়ষ্ট ভাব কাজ করতো, সেটা এখন কিছুটা হলেও দূর হয়েছে।”

এখন বাংলা বিভাগের ছাত্রীরা মনে করছে শিক্ষকদের প্রয়াস একদম সফল হয়েছে, গার্লস কলেজের বাংলা বিভাগের এক ছাত্রী দেবাশ্বেতা সাহার কথায়,“পুঁথিগত শিক্ষার বাইরে গিয়ে এই কোর্সটি আমাদের জ্ঞানের ভান্ডারকেই যে শুধু সমৃদ্ধ করেছে তাই নয়। এই কোর্সটির মাধ্যমে আমাদের সামনে উপার্জনের আরো কয়েকটি দরজা খুলে গেছে।”

এই অভিনব উদ্যোগ প্রসঙ্গে বহরমপুর গার্লস কলেজ (Berhampore Girls College)-র বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অ্যাড অন কোর্সের কো-অর্ডিনেটর ড. মধু মিত্র জানান যে, “প্রচলিত সিলেবাসের বাইরে বেরোতে চেয়েছি আমরা। পেশাগত বিকল্প সম্ভাবনার দিকগুলো সম্পর্কে ছাত্রীদের সচেতন করা আমাদের উদ্দেশ্য। একুশ শতকে ডিজিটাল বিস্ফোরণের যুগে নানা ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই কাজের উপযোগী মানব সম্পদ তৈরি করতে পারলে বিকল্প কর্ম সংস্থান করা যেতে পারে। ছাত্রীদের সেই কাজের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা এই কোর্সের অন্যতম লক্ষ্য।”

বহরমপুর গার্লস কলেজ (Berhampore Girls College)-র অধ্যক্ষ ড. হেনা সিনহা এই প্রসঙ্গে বলেন,“আসলে আমাদের বর্তমান পড়াশোনার জায়গাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে, শুধুমাত্র ডিগ্রী নির্ভর পড়াশোনা( স্কুলে চাকরি, কলেজে চাকরি, ব্যাঙ্কে চাকরি)-র বাইরেও যে জীবিকার বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে একটু বুদ্ধি বা কৌশল প্রয়োগ করলেই তারা কিছু রোজগার করতে পারবে, সেটা তাদের পছন্দ অনুযায়ী, তারা বেছে নিতে পারে, কেউ কোনো বিষয় ভালো প্রকাশ করতে পারে, সে অ্যাংকারিংটা করলো, কেউ হয়তো কোন বিষয় ভালো করে গুছিয়ে লিখতে পারে, সে ব্লগ রাইটিং করলো, এরকম বিভিন্ন দিকে প্রতিভার বিকাশ এবং তার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য দানের লক্ষ্যেই এই ধরনের কোর্সগুলোকে আমরা বেছে নিয়েছি।” এর পাশাপাশি গার্লস কলেজের এই অভিনব উদ্যোগ সমাজেও একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে বলে তার বিশ্বাস।

Google news