কোচবিহারে BSF-এর গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত; মঙ্গলবার বিধানসভায় প্রস্তাব আনতে চলেছে মমতার সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কোচবিহার জেলার সাতভান্ডারী এলাকায় BSF’এর গুলিতে গরু পাচারকারী সন্দেহে তিন ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। শুক্রবার ভোর রাত ২.৩০ মিনিট নাগাদ সিতাই থানার অধীন সাতভান্ডারী সীমান্ত এলাকায় কয়েকজন ব্যক্তি গরু পাচারকারী করছিল বলে অভিযোগ। বিষয়টি নজরে পড়ে সীমান্তে টহলরত BSF- এর জওয়ানদের। সেসময় BSF বাধা দিলে অভিযুক্ত গরু পাচারকারীরা BSF-এর ওপর দা, লাঠি নিয়ে চড়াও হয়, তাতে এক BSF জওয়ান গুরুতর আহত হয়। এরপরই আত্মরক্ষার্থে BSF গুলি চালাতে বাধ্য হয় । আর তাতেই তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এর মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিক, তার নাম প্রকাশ বর্মন। বাকী দু’জন বাংলাদেশি নাগরিক।

BSF’এর তরফে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয় ‘বাংলাদেশ সীমান্তের দিক থেকে বাঁশের ক্যান্টিলিভার দিয়ে গরু পাচারের চেষ্টা করা হলে প্রথমে তাদের ফিরে যেতে বলা হয়। কিন্তু তা না করলে প্রথমে নন লিথাল অস্ত্র দিয়ে তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলার চেষ্টা করলে BSF আকাশে গুলি চালায়।’

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে রওনা দেয় সিতাই থানার পুলিশ। কুচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার সানিরাজ জানান, ‘তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুই জন বাংলাদেশি নাগরিক। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই মৃত্যু।

এদিকে ওই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি তরজা। এদিন সকালেই BSF’এর ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে কুচবিহারের দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন ‘কেন্দ্র অবিলম্বে BSF’কে নিয়ন্ত্রণ করুন। নাহলে যে কোনও সময় ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটবে।’ তিনি বলেন ‘ছোটবেলা থেকেই বিএসএফ’এর অত্যাচার দেখে আসছি, ওরা বারবার সীমান্ত এলাকার মানুষদের ওপর নির্যাতন করে। তার অভিযোগ ‘BSF’এর মদতেই সীমান্তে চোরাচালান চলে। ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা হওয়ার কারণেই মাঝে মধ্যেই BSF’এর জওয়ানরা গুলি চালায়।’

পরে সীমান্ত এলাকায় BSF’এর এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে তোপ দাগেন রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। দেশের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে সম্প্রতি BSF’এর হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তরফে এক বিবৃতি জারি করে BSF’এর নজরদারির পরিসর বাড়ানো হয়। সেখানে বলা হয় পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও পাঞ্জাব রাজ্যে ১৫ কিলোমিটারের বদলে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভিতরে ঢুকে অভিযান, বাজেয়াপ্ত প্রয়োজনে গ্রেফতারও করতে পারবে বিএসএফ। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলেই পার্থ চ্যটার্জি বলেন ‘সীমান্তে BSF’এর এক্তিয়ার বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিধানসভার ১৮৫ নম্বর রুলের অধীনে আমরা বিধানসভায় একটি প্রস্তাব আনতে চলেছি। আগামী মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে দেড় ঘন্টার আলোচনা পর্ব চলবে।’

 তিনি আরও বলেন, BSF’এর এক্তিয়ার বাড়ানো হলে তার প্রভাব কি হতে পারে শুক্রবারই তার দেখা গেল। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রাজ্য পুলিশের হাতে, অন্যদিকে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব BSF’এর। সেক্ষেত্রে দুই বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ঘটতে পারে। তাছাড়া BSF Act- এরও অনুমোদন নেই। ফলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রত্যাহারের দাবিতেই এই আলোচনা করা হবে।’

এই ঘটনায় বিরোধী দল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন ‘তৃণমূলের অলিখিত এজেন্ডা হল BSF, সেনাবাহনীকে কালিমালিপ্ত করা। যাতে আমাদের শত্রু রাষ্ট্রদের সুবিধা হয়।’ তার অভিযোগ ‘তৃণমূলের যে নেতারা সীমান্তে রাজনীতি করেন তারা গরু পাচারে যুক্ত।’

বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং বলেন ‘বিএসএফ’এর ক্ষমতা ৫০ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা বিএসএফ’এর ওপর গুলি চালিয়েছে, আজকে ওই চোরদের ভাল মতো জবাব দিয়েছে। আমাদের এখানে থাকবে আর পাচারের সাথে যুক্ত থেকে লাল লাখ রুপি রোজগার করবে।’ দুই নাম্বারি ব্যবসা করে এই বাংলাকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে শুক্রবারই যখন কুচবিহারে BSF’এর গুলিতে তিন গবাদি পশু পাচারকারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, অন্যদিকে সীমান্ত ফেন্সিং গঠনে জমি অধিগ্রহণ, রাস্তা নির্মাণ, সীমান্ত চৌকি (বিওপি), সুসংহত চেক পোস্ট (আইসিপি), সীমান্ত নাশকতা সহ একাধিক ইস্যুতে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, BSF এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে কলকাতায় এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় কুমার ভাল্লা।

Google news