Indian Railways: রেল এখন টার্গেট বেঁধে দিয়েছে, পূরণ না করতে পারলেই চার্জশিট’ : টিকিট পরীক্ষক

” দাদা, এখন আমাদের টার্গেট বেঁধে দিয়েছে, টার্গেট পূরণ না করতে পারলেই কেস দিচ্ছে”……

সবসময় মোটর বাইক নিয়েই যাতায়াত করি ট্রেনে সচরাচর যাওয়া হয়না। আদ্রতা বেশি থাকায় আজ মনে হল বাইক গ্যারাজে রেখে ট্রেনে করে যাব। সেইমত এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট কেটে দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ালাম। এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতেই শিয়ালদহগামী (Indian Railways)একটি ট্রেন ঢুকতেই উঠে পড়লাম। সম্ভবত নৈহাটি- শিয়ালদহ লোকাল হবে।

যাইহোক, ট্রেনে (Indian Railways) উঠে দেখতে পেলাম একজন টিকিট পরীক্ষক যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ পর আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে একটু দূরে থাকা কয়েকজন আম বিক্রেতাদের দেখছিলেন। আমি নিজে থেকেই ওই টিকিট পরীক্ষককে আমার টিকিট দেখার কথা বললাম। উনি বলে উঠলেন, দাদা, এত বছরে আমাদের এই অভিজ্ঞতাটুকু হয়েছে, মুখ দেখলে বুঝতে পারি। তারপরই গল্প শুরু করে দিলেন আমার সাথে। উনি বলতে লাগলেন,” জানেন দাদা, অনেক কষ্ট করে রেলের চাকরি পেয়েছিলাম। গরীব পরিবার থেকে উঠে এসেছি। কিন্তু এমন দিন আসবে ভাবিনি।” ভাবতেই পারেন, রেলের চাকরির মতো কী আর ভাল হতে পারে? কিন্তু ওই টিকিট পরীক্ষক জানালেন এক অবাক করা কান্ড! তাঁর কথায়, ” দাদা, এখন আমাদের টার্গেট বেঁধে দিয়েছে। টার্গেট পূরণ না করতে পারলেই কেস দিচ্ছে।” পাল্টা জিজ্ঞাসা করা হল, ” কী কেস?” তিনি বললেন, ” টার্গেট পূরণ না করলেই সোজা চার্জশিট!” একটু থেমে তিনি আরও বললেন, ” দাদা, এটা রেলের চাকরি করছি না, এটা সেলসের চাকরি করছি।”

তাহলে বুঝুন! হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। একজন কেন্দ্রীয় সরকারী চাকরি প্রাপ্ত পরিণত রেলের টিকিট পরীক্ষক রেলের চাকরিকে সেলসের চাকরির সঙ্গে তুলনা করছে। শুধু তাই নয়, তিনি এই চাকরিকে তুচ্ছ বলে করেন। তাঁর কথায়, ” এর চেয়ে কোনও কোম্পানির সেলেসের চাকরি করলে বেশী কামাতাম। এখানে তো সে উপায় নেই। জিআরপি আর আরপিএফ টাকা নিয়ে খাওয়াখায়ি করে। নিজের পকেটে ২০০টাকা উপরি ঢোকে। ওতে কী হয় বলুন?”  হঠাৎ মনে হল, উনি যেন এই আদ্যপান্ত সিস্টেমের বাস্তবতা সামনে আনলেন। তারপর দেখলাম উনি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলেন বগির শেষে বসে থাকা ঝুড়ি ভর্তি আম বিক্রেতাদের কাছে।

যাইহোক, মাথায় প্রায় সব চুল উঠে যাওয়া পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই ওই টিকিট পরীক্ষক চারজন আম বিক্রেতার সঙ্গে ঝামেলায় জড়ালেন। আইনসম্মত কোনও কারণ দেখিয়ে ওনাদের থেকে টাকা চাইছেন।

এদিকে সেইসব ঝামেলা মিটতেই কেটে গেল প্রায় মিনিট পনেরো। হাজির হল জিআরপি আর আরপিএফ। ওই ভদ্রলোক চিৎকার শেষ করে এসে বললেন, ” দাদা, এখন বলে দিয়েছে দিনে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দিতে হবে, না হলে চাকরি নিয়ে টানাটানি হবে।” পাল্টা জিজ্ঞাসা করলাম, ” এটা কি আগেও ছিল?” তিনি ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, ” হ্যাঁ ছিল। আগে হাজার খানেক সারা দিনে তুলে দিতে পারলে তো লাফালাফি হত তাকে নিয়ে। কিন্তু এখন অন্তত পাঁচ হাজার না দিতে পারলে হুমকি দেয়।” সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম, ” কে দেয়?” তিনি মৃদু হাসলেন।

সম্প্রতি শিয়ালদহ মেন শাখায় সব ট্রেন বারো বগি হওয়ার আনন্দে উৎসব চলছে। কিন্তু এইসবের আড়ালে রেলের কর্মীরা রেলের উপরের অখুশি। তাঁদের জীবন এখন টার্গেটে বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এক প্রাক্তন রেল কর্তা জানালেন, ” রেল  এখন ব্যবসায়িক হয়ে উঠেছে। এটা এক দিক থেকে ভাল। কিন্তু সেটা যেন রিলায়েন্স না হয়ে উঠে। মনে রাখতে হবে রেল মানুষের স্বার্থে।” অন্যদিকে এক ট্রেন চালকের কথায়, ” রেলের ফরমাস খাটি নামি কোনো বেসরকারী কোম্পানির, সেটা বোঝা এখন চাপের।”

Google news