Modi’s visit to Russia: বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মোদীর রাশিয়া সফর

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Modi’s visit to Russia) বিশেষ বিমান যখন মস্কোতে অবতরণ করবে, তখন সেখানকার ঠাণ্ডা বাতাসে উষ্ণতার এক অনন্য তরঙ্গও থাকবে। রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক নতুন নয়, কোল্ড ওয়ারের সময় থেকে তা চলে আসছে। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেন সংঘাতের পরে এই সম্পর্কের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।

রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্ব সেই সময় থেকে শুরু হয়েছে যখন উভয় দেশ তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে লড়াই করছিল। শীত যুদ্ধের সময় যখন বিশ্ব দুটি দলে বিভক্ত ছিল, তখন ভারত ও রাশিয়া একে অপরের সঙ্গ দিয়েছে। বর্তমানে, যখন পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখন ভারত ও চিনের মতো দেশগুলি রাশিয়ার তেলের প্রধান ক্রেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি রাশিয়ার কাছে ভারতের কৌশলগত গুরুত্বকে তুলে ধরে।

PM Modi's Moscow visit draws 'jealous' eyes from the West, says Kremlin |  External Affairs Defence Security News - Business Standard

প্রধানমন্ত্রী মোদীর (Modi’s visit to Russia) নেতৃত্বে ভারত ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করেছে। ভারত এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে সওয়াল করেছে এবং রাশিয়ার সমালোচনা করা থেকে বিরত রয়েছে। এই নীতি ভারতকে উভয় পক্ষকে আঘাত না করে তার বৈদেশিক নীতির স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

Chinese President To Visit Moscow On March 20-22 Following Invitation From  Putin

বর্তমানে রুশ-ভারত বন্ধুত্ব নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ, ইদানিং রাশিয়ার সঙ্গে চিনের বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ত্রিকোণীয় সম্পর্কের জটিলতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন প্রধানমন্ত্রী মোদী সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে কাজাখস্তানের আস্তানায় বৈঠকে তাঁর বিদেশ মন্ত্রীকে পাঠান। বৈঠকটিতে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর (Modi’s visit to Russia) শেষ রাশিয়া সফর ছিল ২০১৯ সালে ভ্লাদিভোস্টকে একটি অর্থনৈতিক ফোরামের জন্য, যেখানে তাঁর শেষ মস্কো সফর ছিল ২০১৫ সালে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের সময় পুতিন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর শেষ দেখা হয়েছিল, তারপরে ২০২১ সালে পুতিনের দিল্লি সফর হয়েছিল। দুই নেতা গত ১০ বছরে ১৬ বার দেখা করেছেন।

Putin invites PM Modi to Russia, discusses Ukraine war, oil trade with  Jaishankar - The Week

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতীয় সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের একটি বড় অংশ সরবরাহ করেছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রায় ৭০ শতাংশ অস্ত্র, বিমান বাহিনীর ৮০ শতাংশ ব্যবস্থা এবং নৌবাহিনীর ৮৫ শতাংশ প্ল্যাটফর্ম সোভিয়েত ইউনিয়ন সরবরাহ করেছিল। ভারতের প্রথম বিমানবাহী রণতরী আই. এন. এস বিক্রমাদিত্য ২০০৪ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে অধিগ্রহণ করা হয়, যা এই সম্পর্কের শক্তির প্রমাণ।

তবে, ইউক্রেনের দ্বন্দ্ব রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করেছে, যার ফলে ভারতকে তার সামরিক ক্রয়ের বৈচিত্র্য আনতে হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল, ফ্রান্স এবং ইতালির সঙ্গে নতুন প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব রাশিয়ার উপর নির্ভরতা হ্রাস করার দিকে ভারতের কৌশলগত পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে।

মোদীর এই সফর অনেক দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, এই সফর ইঙ্গিত দেয় যে, বিশ্বের উত্থান-পতন নির্বিশেষে ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের উষ্ণতা অক্ষুণ্ণ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই সফরটি তার বিদেশ নীতির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভারতের প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে, বিশেষ করে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় দেশগুলির সঙ্গে।.

Putin, Xi Jinping's absence at G20 Summit no concern', says EAM Jaishankar  | Today News

রাশিয়ার জন্য, এই সফরটি ভারতের সাথে তার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার একটি সুযোগ, বিশেষত এমন এক সময়ে যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলি রাশিয়াকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে বাধ্য করেছে। ভারতের জন্য, এই সফরটি বিশ্ব মঞ্চে তার অবস্থানকে সুসংহত করতে এবং রাশিয়ার সাথে সম্পর্ককে আরও জোরদার করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

মোদীর এই সফর (Modi’s visit to Russia) বিশ্বের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছে যে ভারত তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার পাশাপাশি তার সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক খেলোয়াড়। এই সফর আরও ইঙ্গিত দেয় যে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকবে।

Google news