মহালয়া (Mahalaya) মানেই পিতৃপক্ষের অবসান আর দেবী পক্ষের সূচনা। মহালয়া (Mahalaya) মানেই পুজোর প্রস্তুতি আরও জোর কদমে চলা। মহালয়া (Mahalaya) মানে ভোর চারটের সময় উঠে রেডিওয়ের সামনে কান পাতা। এই মহালয়াতে গঙ্গা (Mahalaya) সহ বিভিন্ন নদীর ঘাটে তর্পণ করতে দেখা যায় সাধারণকে। কেন মানুষ পিতৃপুরুষকে জল দেওয়ার জন্য মহালয়াকে বেছে নেয়?
তর্পণের উল্লেখ মহাভারতে রয়েছে। রোমাঞ্চকর সেই কাহিনী। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে মারা যাওয়ার পর কর্ণ স্বর্গের উদ্দেশ্যে রহনা দেন। স্বর্গে যাওয়ার পর তাঁকে হীর, জহরত, মনি-মানিক্য খেতে দেওয়া হয়। সেই সময় কর্ণ অবাক হয়ে যান। তিনি দেবরাজ ইন্দ্রকে বলেন, এসব তিনি খাবেন কীভাবে। সেই সময় দেব ইন্দ্র বলেন, জীবিত কালে তিনি অনেক দান, ধ্যান করেছেন। এমনকী তিনি রক্ষা কবচও দান করেছেন। কিন্তু তিনি কখনই পিতৃপুরুষকে জল দেননি। তাই তিনি স্বর্গে জল খেতে পারবেন না। এরপরেই একপক্ষ কালে কর্ণ মর্তে ফিরে আসেন। নিজের পিতৃ পুরুষকে অন্ন জল দেন। নিজের প্রায়শ্চিত্য করেন। এই একপক্ষ কালকে পিতৃপক্ষ বলা হয়। শেষে তর্পণ হয়। তারপরেই দেবী পক্ষের সূচনা হয়। আবার রামায়নেও তর্পণের উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়নে কোনও শুভ কাজে যাওয়ার আগে পিতৃপুরুষকে জলদানের উল্লেখ রয়েছে। রাবনের সঙ্গে যুদ্ধ লড়তে যাওয়ার আগেই রাম পিতৃপুরুষকে জল দান করেছিলেন।
মহালয়ার দিন তর্পণ করার প্রচলন রয়েছে। এই দিন দেবী দুর্গার চক্ষু আঁকা হয়। মহালয়া শব্দের অর্থ হল মহান আলয় অর্থাৎ আশ্রয়। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাকে আশ্রয় বোঝানো হয়। এদিনই পিতৃপক্ষের অবসান হয়। দেবী পক্ষের সূচনা হয়। সেক্ষেত্রে মহালয়াকে অনেকে শুভ মনে করেন। সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাশ দেবীপক্ষের সূচনাতে হয়। এছাড়াও তর্পণের অর্থ হল জগৎব্যাপী মহামিলন ক্ষেত্র। তাই একে কখনই অশুভ বলা যেতে পারে না। আবার মহালয়ার দিন তর্পণ করা হয়। অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দান করা হয়। এটা পিতৃপুরুষকে স্মরণ করার দিন। তাই কোনওভাবেই এই দিনটাকে শুভ মনে করা যেতে পারেন না বলে অনেকে মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, এই দিনটা আসলে শোক পালনের দিন।