ন্যাশনাল ডেস্কঃ বুধবার উত্তরাখণ্ডের চামোলি বাজারের কাছে অলকানন্দা নদীর তীরে নমামি গঙ্গে প্রকল্পের জায়গায় হঠাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, ১১ জন গুরুতর আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে প্ল্যান্ট অপারেটরের মৃত্যুর পর বুধবার সকালে স্বজন, গ্রামবাসী ও পুলিশ সদস্যরা যখন পঞ্চনামা কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন তখন হঠাৎ করে প্ল্যান্টের দিকে যাওয়ার রাস্তার লোহার রেলিংয়ে কারেন্ট চলে যায়, যার ফলে এ ঘটনা ঘটে। গ্রামপ্রধান, পিপলকোটি ফাঁড়ির ইনচার্জ এবং তিন হোমগার্ড জওয়ানও মৃতদের মধ্যে রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান- হঠাৎ স্রোত ছড়িয়ে পড়ে অনেকেই অলকানন্দায় ঝাঁপ দেন
চামোলি থেকে AIIMS ঋষিকেশে এয়ারলিফ্ট করা ছয় জনের সাথে আসা পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনার জন্য ইউপিসিএল এবং নমামি গঙ্গে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরিচালনাকারী আউটসোর্সড সংস্থাকে দায়ী করেছে।
চামোলি জেলার সেম ডুংরা গ্রাম থেকে আসা দীপক ফারসওয়ান বলেছেন যে হারমনি গ্রামের যুবক মঙ্গলবার রাতে গাছের চত্বরে মারা গিয়েছিল। খবর পেয়ে সকালে গ্রামবাসীরা কারখানায় যান। নিহতের স্বজনদের এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও ভাইকে সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ দেখে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
এসময় হঠাৎ করে প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ চলে যায় এবং শর্ট সার্কিট হয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন বহু মানুষ। কোনমতে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে দিল সেখানে। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে অলকানন্দা নদীতে ঝাঁপ দেন কয়েকজন। সেখানে নির্বাহী পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেনে নিন কীভাবে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল
চামোলি শহরের অলকানন্দা নদীর তীরে নমামি গঙ্গে প্রকল্পের অধীনে একটি নিকাশী শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে। হরমানি গ্রামের বাসিন্দা অপারেটর গণেশ গতকাল রাতে মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর কারণ বলে জানা গেছে। বুধবার সকালে খবর পেয়ে নিহতের স্বজন, গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা কারখানায় পৌঁছান। পিপলকোটি ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই প্রদীপ রাওয়াত তিনজন হোমগার্ড সহ মৃতের পঞ্চনামা পূরণ করতে এসেছিলেন। সেই সময় প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ ছিল না।
আহতরা জানায়, সকাল ১১টার দিকে হঠাৎ প্ল্যান্টে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় এবং হঠাৎ কারেন্ট চলে যায় প্ল্যান্টের দিকে যাওয়ার রাস্তার লোহার রেলিংয়ে। এ সময় এই সাকরা ব্রিজ ছিল ভিড় পূর্ণ। কারেন্ট চলতে শুরু করলে সেতুর ওপর জড়ো হওয়া লোকজন একে অপরের ওপর পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। সর্বত্র হইচই পড়ে গেল। এর মধ্যে ১৫ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান, প্রায় ১১ জন গুরুতর দগ্ধ হন। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই চমলি থেকে রাজধানী দেরাদুনে তোলপাড়।
স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যেখান থেকে আহত ছয়জনকে উচ্চতর কেন্দ্র এইমস ঋষিকেশে রেফার করা হয়েছে। আহতদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে AIIMS-এ নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী ধামি হেলিকপ্টারে করে ঘটনাস্থলে রওনা হলেও চামোলিতে খারাপ আবহাওয়ার কারণে তার হেলিকপ্টার অবতরণ করতে পারেনি। এরপর আহতদের অবস্থা জানতে AIIMS-এ পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী।
দুর্ঘটনার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়
প্ল্যান্ট অপারেটর কনফিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ম্যানেজার ভাস্কর বলেন, প্ল্যান্টে ৪১৫ ভোল্ট পাওয়ার সাপ্লাই আছে। বুধবার সকালে হঠাৎ ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এই দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও ইউপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিল কুমার বলেছেন যে ১১ কেভি লাইন থেকে ট্রান্সফরমারের সাহায্যে প্রযুক্তিগতভাবে ৪৪০ভোল্ট শক্তি সরবরাহ করা হয়েছিল।
১১,০০০এর কারেন্ট এগিয়ে গেলে প্রথমে ট্রান্সফরমার, ক্যাবল তারপর মিটার ফেটে যেত। ইউপিসিএল প্রাথমিক তদন্তে মিটার পর্যন্ত সরবরাহের যন্ত্রপাতি সঠিক বলে মনে করেছে। তিনি আরও বলেন, প্ল্যান্টের ভেতরে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর খবর বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানো হয়নি। স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে দুর্ঘটনার কারণ কী, তা তদন্তের পরই পরিষ্কার হবে।