দীর্ঘ ৯ বছর ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন জাস্টিন ট্রুডো (Justin Trudeau), যিনি রাজনৈতিক জীবনে একটি শক্তিশালী নেতৃত্বের পরিচয় দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি ঘোষণা করেন যে, তিনি আর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে চান না। তাঁর জনপ্রিয়তা এবং অ্যাপ্রুভাল রেটিং এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিম্নমুখী হওয়ায়, দলের ভিতর থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবি উঠেছিল। পাশাপাশি, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সমস্যা এবং আর্থিক সংকটের মতো চ্যালেঞ্জগুলি তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে আরও জটিল করে তোলে। এর পরেই ৫৯ বছর বয়সী লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নি (Mark Carney) প্রাথমিক নির্বাচন শুরুর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেন এবং ৮৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে হারিয়ে জয়ী হন। এই নির্বাচনে মার্ক কার্নির জয় কানাডার রাজনীতির নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে।
জাস্টিন ট্রুডোর বিদায়ী ভাষণ
ট্রুডোর বিদায়ী ভাষণ ছিল আবেগময়। তিনি তাঁর দল, দেশ, এবং জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “কোনও ভুল করলে চলবে না। এটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা পাওয়া সহজ নয়, এবং কানাডা তার স্বাধীনতা অনেক কষ্টে অর্জন করেছে।” ট্রুডো আরও বলেন, “কানাডিয়ানরা আজ যে সমস্যার সম্মুখীন, তা শুধু প্রতিবেশী দেশের কারণে নয়, অর্থনৈতিক সংকটও অন্যতম কারণ।”
তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে, ট্রুডো তাঁর সরকারের শাসনকালের স্মৃতি, সাফল্য, এবং চ্যালেঞ্জগুলির প্রতিফলন তুলে ধরেছেন। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “বিগত ১০ বছরে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি এবং দেশের উন্নতির জন্য আমি গর্বিত। তবে, এখন সময় এসেছে দেশের ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিকনির্দেশনা প্রাপ্তির।”
মার্ক কার্নি: নবাগত নেতা, নতুন উদ্দীপনা
এবার নতুন প্রধানমন্ত্রীর দিকে নজর দেওয়া যাক, মার্ক কার্নি। লিবারেল পার্টির নতুন নেতা হিসেবে তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। যদিও তিনি (Mark Carney) রাজনীতিতে নতুন, তবে তাঁর পেশাগত জীবন ও অভিজ্ঞতা তাঁকে এক বিশাল পরিচিতি দিয়েছে। পূর্বে তিনি কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ব্রিটিশ ব্যাংকিং সেক্টরে তাঁর কর্মজীবন ছিল সমৃদ্ধ। এর ফলে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং অর্থনীতির গভীর জ্ঞান তাঁর জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে।
মার্ক কার্নি তাঁর নির্বাচনী ভাষণে বলেছেন, “আমি কানাডাকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে দেখতে চাই।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে চুক্তি বিষয়ে আশাবাদী তিনি। তিনি কানাডাকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
চ্যালেঞ্জ এবং নতুন উদ্যোগ
মার্ক কার্নির কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে কানাডার অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন। ভারতের সঙ্গে চলমান কূটনৈতিক সংকট যেমন এক অজানা দিক, তেমনি দেশের ভেতরে আর্থিক সমস্যা থেকেও নতুন প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক থাকতে হবে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর লক্ষ্য হবে কানাডার অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং নাগরিকদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করা। এর পাশাপাশি, তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে কানাডার শক্তিশালী অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে চান। ট্রুডোর বিদায় এবং কার্নির অধীনে রাজনৈতিক পরিবর্তনের এ সময়, কানাডার জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে পারে।
ট্রুডোর দীর্ঘ ৯ বছরের শাসনকালে অনেক সাফল্য এবং বিতর্কের সৃষ্টি করে ছিল। তাঁর সময়কাল, রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন উজ্জ্বল ছিল, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও ছিল। তবে, এখন সময় এসেছে নতুন নেতৃত্বের, এবং মার্ক কার্নি তার শাসনকাল শুরু করেছেন বড় দৃষ্টিভঙ্গি ও আশা নিয়ে। কানাডার জনগণের জন্য এটি একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে, যেখানে একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল এবং আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত দেশ হিসেবে কানাডার উত্থান হতে পারে।