কলকাতার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে শুরু হল চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক মেশিনের মেলা, যার পোশাকি নাম “মেডিকল এক্সিবিশন ২০২৫।” ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে “মেডিকল এক্সিবিশন ২০২৫”, (Medicall Exhibition) যা রাজ্যে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত একটি বৃহত্তম স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্মেলন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের সভাপতি ডঃ মলয় পীট। তার উপস্থিতিতে, দেশের পাশাপাশি বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলিও এ মেলায় তাদের আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদর্শন করছে।
ডঃ মলয় পীট উদ্বোধনী ভাষণে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য পরিষেবায় অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং বলেন, “রাজ্য সরকারের যে উদ্যোগে গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর উন্নতি হচ্ছে, তা আগে কল্পনাও করা যেত না। বিশেষত, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সরকারের যে বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে, তা প্রশংসনীয়।”
তিনি রাজ্য সরকারের শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন, যেখানে শিল্পপতিদের জন্য সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তার মতে, রাজ্য সরকার শিল্প বিনিয়োগের জন্য একটি উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলছে, যা শুধু শিল্পখাত নয়, দেশের আর্থিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি আরও বলেন, আগামী দু’মাসের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে একটি বিশেষ আলোচনা সভা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ডঃ মলয় পীট স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসঙ্গে কথা বলেন। “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তির ব্যবহারে স্বাস্থ্য খাতে বিপুল পরিবর্তন এসেছে। এমনকি চীনে একটি হাসপাতাল সম্পূর্ণ রোবটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। তাহলে আমরা কেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে উন্নত করতে পারব না?” তিনি টেলিমেডিসিন, টেলি-প্যাথলজি, টেলি রেডিওলজি, টেলি আইসিইউ এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
সম্প্রতি হায়দ্রাবাদে টেলি-রোবোটিক সার্জারির মাধ্যমে দুটি জটিল হার্ট সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার উদাহরণ দেন ডঃ মলয় পীট। তিনি জানান, এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য এবং উন্নত হতে পারে।
এছাড়া, তিনি আগামী দু’বছরের মধ্যে বোলপুরে একটি পিজি কোর্স সমতুল্য কোর্স চালু করার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা ১০ মাসের অনজব প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং এবং ২ মাসের থিওরি ট্রেনিং শেষ করে পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স সম্পন্ন করতে পারবেন। এটি আসলে ভবিষ্যতের চিকিৎসকদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সহায়ক হবে।
এই এক্সিবিশনে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রদর্শন করা হচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ভিত্তিক রোগ নির্ণয়, রোবোটিক সার্জারি, টেলি-মেডিসিন পরিষেবা এবং জেনেটিক গবেষণার মতো প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনগুলি মেলায় প্রাধান্য পাচ্ছে। এসব সেবা দেশের এবং বিদেশের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করছে।
এসআই সার্জিক্যালের এমডি সঞ্জয় মুখার্জি বলেন, “এই এক্সিবিশন স্বাস্থ্য খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে, এবং ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা এখানে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজবেন।”
অল বেঙ্গল প্রাইভেট নার্সিং হোম অ্যান্ড হসপিটাল ওনার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য যুগ্ম সম্পাদক তাহের শেখ জানান, “রাজ্যের ২৫০০ এর বেশি বেসরকারি নার্সিং হোম ও হাসপাতালের মালিক এবং দেশব্যাপী প্রচুর ডাক্তারবাবু এই এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করবেন। এ ধরনের প্রদর্শনী স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
“মেডিকল এক্সিবিশন ২০২৫” স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি ঐতিহাসিক এবং বিপ্লবী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই তিন দিনব্যাপী সম্মেলন ও প্রদর্শনী স্বাস্থ্য পরিষেবা, চিকিৎসা প্রযুক্তি, এবং সেবার মান উন্নয়নের নতুন দিশা দেখাবে বলে আশা করা হচ্ছে।