খবর এইসময় ডেস্কঃ প্রায় আড়াই বছর পরে যুবভারতীতে ডার্বি (Derby)। মরশুমের প্রথম বড় ম্যাচ। দর্শক ঠাসা স্টেডিয়াম। শহর কলকাতার সব রাজপথ এসে মিশেছিল বাঙালির বড় আপন, বড় প্রিয় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। রবিবারের ডার্বি জমিয়ে দেওয়ার জন্য সব মশলাই মজুত ছিল। কিন্তু দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই কিন্তু উচ্চমার্গের হল না। সুমিত পাসীর আত্মঘাতী গোলে শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি তোলা থাকল জুয়ান ফেরান্দোর দলের জন্য। ডুরান্ড কাপে প্রথম জয় পেল মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গল সেখানে এখনও জয়ের খোঁজে।
কনস্ট্যানটাইনের ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) এখনও গোছানো নয়। চলতি মাসের ৪ তারিখ থেকে অনুশীলন শুরু করেছেন সাহেব কোচ। এই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি যতটা তৈরি করতে পেরেছেন দলকে, তা নিয়েই নেমে পড়েছিলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের (Mohun Bagan) বিরুদ্ধে।
ফেরান্দোর মোহনবাগান অবশ্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছিল। দলগঠনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পেয়েছেন স্পেনীয় কোচ। পছন্দের ফুটবলার নিয়ে এসে দল তৈরি করেছেন। ডুরান্ড কাপের তিন-তিনটি ম্যাচ হয়ে গেলেও মোহনবাগান কিন্তু এখনও ফুল ফোটাতে পারেনি। বিরতির ঠিক আগে লিস্টন কোলাসোর কর্নার সুমিত পাসির গায়ে লেগে গোল হয়ে যায়। সেই গোল আর শোধ করা সম্ভব হয়নি ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে। আত্মঘাতী গোলে জিতল সবুজ-মেরুন। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ ভেঙে গোল করতে পারল না মোহনবাগান।
বড় ম্যাচের আগে খাতায়-কলমে ফেরান্দোর দলকেই সবাই ফেভারিট ধরেছিলেন। হুগো বুমোস, লিস্টন কোলাসো, জনি কাউকোর মতো খেলোয়াড় দলে থাকলেও বিদেশি স্ট্রাইকার নেই বাগানে। রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামসকে আগেই ছেড়ে দিয়েছেন ফেরান্দো। যার জন্য অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এদিনের ডার্বিতে মোহনবাগান যখন গোলের রাস্তা খুঁজছে, তখন অনেকেরই মনে হয়েছে রয় কৃষ্ণ দলে থাকলে অনেক আগেই গোল করে ফেলত সবুজ-মেরুন। ফিজির গোলমেশিন দলে থাকলে আরও চাপ বাড়ত ইস্টবেঙ্গলের উপরে, তা বলাই বাহুল্য।
মোহনবাগানকে আটকে রাখার জন্য ডিফেন্সে লোক বাড়িয়েছিলেন কনস্ট্যানটাইন। সামনে কেবল এলিয়ান্দ্রো। এছাড়া আর কী স্ট্র্যাটেজি নিতেন অভিজ্ঞ কনস্ট্যানটাইন! কিন্তু খেলা যত গড়াতে থাকে বল পজেশনও বাড়তে থাকে মোহনবাগানের অনুকূলে। ক্রমে সবুজ-মেরুনের রক্ষণভাগে একা হয়ে যান এলিয়ান্দ্রো। তাঁকে বল দেওয়ার কেউ নেই। বল নিজেদের দখলে রেখে আক্রমণের ঢেউ যে তুলে আনবে ফেরান্দোর দলের গোলমুখে তাও সম্ভব হয়নি ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে। প্রথমার্ধে লাল-হলুদ একবারই ইতিবাচক আক্রমণ তৈরি করেছিল। ইভান গনজালেজের দূরপাল্লার সেই শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। প্রথমার্ধে এই একবারই মনে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল গোল করতে পারে।
বিরতির ঠিক আগে গোল পেয়ে যায় মোহনবাগান। বিরতির ঠিক আগে গোল পেয়ে গেলে যে কোনও দলেরই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগান আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়াবে, এটাই সবাই ধরে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। অনিকেত যাদব অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। উলটোদিকে মোহনবাগান একাধিক আক্রমণ তুলে নিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণে। এরকমই আক্রমণ থেকে আশিক প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন। আরও দু-একবার সুযোগ তৈরি করেছিল মোহনবাগান, কিন্তু সেগুলো থেকে গোল হয়নি। গোলসংখ্যাও বাড়েনি। কনস্ট্যানটাইন জানতেন নিজের সীমাবদ্ধতা। সেই অনুযায়ী চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মাঠে নেমে তো খেলবেন খেলোয়াড়রা। পিছিয়ে থাকা অবস্থায় একক দক্ষতায় গোল করার মতো খেলোয়াড় নেই ইস্টবেঙ্গলে। দলকে তাতানোর মতো খেলোয়াড়েরও দেখা পাওয়া যায়নি। অবশ্য মরশুম সবে শুরু।
ডুরান্ডের প্রথম দু’টি ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করায় চাপ একটা তৈরি হচ্ছিল ফেরান্দোর উপরে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জয় পাওয়ায় সেই চাপ অনেকটাই কাটিয়ে ফেললেন ফেরান্দো। টানা ছ’টি ডার্বি জিতল মোহনবাগান। সবুজ-মেরুন সমর্থকরা বেজায় খুশি। যুবভারতীতে উড়ল সবুজ-মেরুন পতাকা।