সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের একাধিক শাসকদলের নেতারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেই আলোচনার মাঝেই ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি (Nawsad Siddique on JU) সাহসী মন্তব্য করে ছাত্রদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “যে সমস্ত নেতারা ক্ষমতা দেখানোর কথা বলছেন, পুলিশ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন?” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি শাসকদলের নেতাদের সমালোচনা করেছেন এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
রাজনৈতিক মহলে তীব্র উত্তেজনা
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপর হামলার ঘটনা এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক বিতর্কের পর, শাসকদলের একাধিক নেতা যাদবপুরের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করেছেন। তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা যেমন, অরূপ বিশ্বাস, রাজ চক্রবর্তী, মদন মিত্র এবং সায়নী ঘোষ এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তাঁরা একে একে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাঁদের ‘টার্গেট’ ছিল বাম এবং অতিবাম ছাত্ররা, যারা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক আন্দোলনগুলিতে সক্রিয়।
এই পরিস্থিতিতে, নওশাদ সিদ্দিকি বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি শাসকদলের নেতাদের প্রতি নিজের তীব্র অবস্থান জানিয়ে বলেন, “যদি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতা দেখাতে আসেন, তাহলে আলিয়া, কলকাতা এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও চুপ থাকবে না।”
আইএসএফ বিধায়কের বার্তা: আলোচনার মাধ্যমে সমাধান
নওশাদ সিদ্দিকি আরও বলেন, “ক্ষমতা দেখিয়ে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না। আমাদের সকল সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে হবে। তাই আমি মনে করি, যদি সমস্যা থাকে, তবে সেটা কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্রদের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান হবে।” তাঁর এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রদর্শনকে অকার্যকর বলে অভিহিত করেছেন এবং বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছেন।
ব্রাত্য বসুর উপর হামলা ও বিতর্ক
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি যে ঘটনাটি সবার সামনে আসে, তা ছিল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ। এই ঘটনায় বাম-অতিবাম ছাত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, যদিও পাল্টা ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে এক ছাত্রকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বিষয়টি এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, আদালত পর্যন্ত এই ঘটনা পৌঁছায় এবং একাধিক রাজনৈতিক দল এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র মন্তব্য করতে থাকে।
শাসকদলের নেতাদের বক্তব্য
তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্য ছিল, “যাদবপুরে বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক দলের আখড়া ছিল, এবং যেখানে বাক্য বল প্রয়োগে সেখানে বাহুবল প্রয়োগই উৎকৃষ্ট দাওয়াই।” এই বক্তব্যে মদন মিত্রের মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক তৈরি করেছে। তবে, নওশাদ সিদ্দিকি এই ধরনের শক্তি প্রদর্শনকে সমর্থন করেননি। তিনি মনে করেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে আলোচনার পথই সবচেয়ে সঠিক এবং সভ্য পথ।
রাজনৈতিক কৌশল এবং ছাত্রদের অবস্থান
এখানে, একদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, শাসকদলের নেতারা ছাত্রদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য এই ধরনের মন্তব্য করছেন, অন্যদিকে নওশাদ সিদ্দিকির মতামত যে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করা যেতে পারে, তা অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।
এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে পৌঁছেছে। শাসকদলের নেতাদের একাধিক হুঁশিয়ারির পাশাপাশি, নওশাদ সিদ্দিকির সাহসী মন্তব্য ক্ষমতা প্রদর্শন এবং সংলাপের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে এক তীব্র রাজনৈতিক আলোচনার সূচনা করেছে। এটি কেবল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাই নয়, বরং গোটা শিক্ষাব্যবস্থার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা হবে, তা ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করছে।