Nepal Violence: নেপালে রাজকীয় দণ্ড: ভাঙচুরের দায়ে প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে জরিমানা

কাঠমান্ডু: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাজতন্ত্রপন্থীদের সাম্প্রতিক সহিংস (Nepal Violence) বিক্ষোভের জেরে প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের উপর আর্থিক জরিমানা ধার্য করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিক্ষোভ চলাকালীন সরকারি সম্পত্তি ও পরিবেশের ক্ষতির অভিযোগে কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটন সিটি (কেএমসি) প্রাক্তন রাজাকে ৭ লক্ষ ৯৩ হাজার নেপালি রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

শনিবার কাঠমান্ডুর পূর্বাংশে সকাল ৭টায় কারফিউ তুলে নেওয়ার পর শহরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসে। এর আগে, তিনকুনে-বানেশ্বর এলাকায় রাজতন্ত্রের সমর্থকদের ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর শুক্রবার বিকেল ৪টা ২৫ মিনিট থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুঁড়ে, একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে হামলা করে, রাস্তায় যানবাহন জ্বালিয়ে দেয় এবং বহু দোকানে লুটপাট চালায়। এই সংঘর্ষে একজন টিভি ক্যামেরাম্যানসহ দুইজন নিহত হন এবং ১১০ জন আহত হন।

কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটন সিটির মেয়র বলেন্দ্র শাহ প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের মহারাজগঞ্জের নির্মলা নিবাসে একটি চিঠি পাঠিয়ে এই জরিমানার কথা জানিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাক্তন রাজার আহ্বানে আয়োজিত বিক্ষোভের ফলে মহানগরীর বিভিন্ন সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

জানা গেছে, এই বিক্ষোভের প্রধান উদ্যোক্তা দুর্গা প্রসাই একদিন আগেই জ্ঞানেন্দ্র শাহের সঙ্গে দেখা করে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও হিন্দু রাষ্ট্রের দাবিতে আন্দোলনের জন্য দিকনির্দেশনা লাভ করেছিলেন।

যদিও সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি, গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, প্রাক্তন রাজার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং তার বাসভবনের নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যাও কমানো হয়েছে। শনিবার শহরে পুনরায় সমস্ত ধরনের যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে, দোকানপাট খুলেছে এবং জনজীবন স্বাভাবিক হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক শুক্রবারের ভাঙচুরের কেন্দ্রস্থল তিনকুনে এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির নেতা ধাওয়াল শমসের রানা ও রবীন্দ্র মিশ্রসহ ১১২ জনকে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে, ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেসের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে শুক্রবারের ঘটনার জন্য জ্ঞানেন্দ্র শাহকে দায়ী করা হয়েছে। দলের মুখপাত্র প্রকাশ শরণ মাহাত বৈঠকের পর জানান, “আমরা রাজতন্ত্রপন্থীদের নামে পরিচালিত কার্যকলাপ পর্যালোচনা করেছি এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে একটি সর্বগ্রাসী শাসন চাপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই সহিংস কার্যকলাপ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং প্রাক্তন রাজাকে এর সম্পূর্ণ দায়ভার নিতে হবে।”

নেপালের বণিকসভা (এফএনসিসিআই) এবং নেপালি শিল্প ও উদ্যোক্তা ফেডারেশনও এই সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। উভয় বাণিজ্যিক সংগঠন পৃথক বিবৃতিতে সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে। তারা বলেছে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকার সকলের থাকলেও, নাগরিকদের ও ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও ব্যবসা করার অধিকার লঙ্ঘন করা উচিত নয়।

এনডিটিভি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার নেপালের নাগরিক সমাজের আটজন বিশিষ্ট নেতা এক যৌথ বিবৃতিতে জ্ঞানেন্দ্র শাহের “রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়” হওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, জ্ঞানেন্দ্র শাহের এই রাজনৈতিক সক্রিয়তা তার পূর্বপুরুষদের জাতি গঠনের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারে।

উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি মাসে গণতন্ত্র দিবসের পর থেকে রাজতন্ত্রপন্থীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জ্ঞানেন্দ্র শাহের “দেশ রক্ষা ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে” এই মন্তব্যের পরেই তারা কাঠমান্ডু ও অন্যান্য অংশে রাজতন্ত্র পুনর্বহালের দাবিতে সমাবেশ শুরু করে।