মনিকা হালদার, মুর্শিদাবাদঃ পেশায় ক্ষেত মজুর রফিকুল ইসলাম। স্বামী-স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁদের চারজনের সংসার। চাষবাস করে অভাবের সংসারে কোনওমতে দিন গুজরান রফিকুল।এই অভাবের মধ্যেই দুই মেয়ে সাদিয়া ও রোজাতনকে স্কুলে ভর্তি করেছেন। স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী তারা।বছর কয়েক আগে হঠাৎই একদিন মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে রফিকুলের দুই মেয়ে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসা শুরু হয়। বিভিন্ন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় ওই দু-জন থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত । রক্তাল্পতার কারনে প্রতি মাসে রক্তের প্রয়োজন হবে তাদের বাঁচিয়ে রাখতে গেলে। ডাক্তারবাবুর মুখে এই কথা শোনামাত্র রফিকুলের মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়ে।তারপর থেকে এইভাবে প্রতি মাসে রক্তের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হয় ক্ষেতমজুর বাবার। চাহিদামত এই মাসেও সাদিয়া ও রোজাতনের রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু বাধসাধে লকডাউন। কোনও রকম যানবাহন চলছে না যাতে করে তাঁদের হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।ফলত এই মাসে রক্ত জোগাড় করতে না পেরে হতাশায় ভুগছিলেন রফিকুল।শেষমেশ দ্বারস্থ হন প্রশাসনের। এ বিষয়ে যোগাযোগ করেন দৌলতাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ময়ুরী ঘোষের সঙ্গে । শোনা মাত্রই তিনি থানার গাড়ি করে সাদিয়া ও রোজাতন খাতুন ও তাদের পরিবারের লোকজনদের হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে রক্তের ব্যবস্থা করে দেন। এই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ওসি বলেন, ‘দেখুন, শুধু চোর ,ডাকাত ,গুন্ডাদের ধরে শাস্তি দেওয়াটাই আমাদের কাজ নয়। একটা সুস্থ্য – সুষ্ঠু সমাজ গড়তে সামাজিক বাঁধনে মানুষ জনেদের বেঁধে রাখাতে আমরা দায়বদ্ধ। আর এখন এই লকডাউন পেরিয়োডে অসহায় এবং অসুস্থ্য মানুষের পাশে থাকাটা বিশেষ ভাবে জরুরি।’
অন্যদিকে, বিধবাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া থেকে শুরু করে সমাজের বহু কাজে লিপ্ত থাকা দৌলতাবাদ থানার ওসির এমন মানবিক মুখ বারবার জনসম্মুখে ভেসে ওঠায় খুশি দৌলতাবাদবাসী । রক্তের জোগান পেয়ে সাদিয়া ও রোজাতনের পরিবারের পক্ষ থেকেও সাধুবাদ জানিয়েছেন দৌলতাবাদ থানার ওসিকে।