উদয়পুর: ভারতের ইতিহাস রচনার পদ্ধতি এবং তাতে সন্নিবেশিত তথ্যের সত্যতা নিয়ে আবারও বিতর্কের ঝড় তুলেছেন রাজস্থানের রাজ্যপাল (Rajasthan Governor) হরিভাউ কিষণরাও বাগদে। বুধবার উদয়পুরের কুম্ভ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মহারাণা প্রতাপ জয়ন্তী উপলক্ষে এক সেমিনারে তিনি দাবি করেছেন যে, ভারতের প্রাথমিক ইতিহাস বিদেশীদের দ্বারা লেখা হয়েছিল এবং তাতে অনেক ভুল তথ্য রয়েছে। তার বক্তব্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয়টি ছিল, যোধা বাইয়ের সাথে আকবরের বিয়েকে ‘মিথ্যা’ বলে অভিহিত করা।
রাজ্যপাল বাগদে তার বক্তব্যে আকবরনামার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, আকবরের আত্মজীবনীতে তার কোনো বিয়ের উল্লেখ নেই। তিনি আরও দাবি করেন যে, আমেরের রাজা ভরমল তার রাজকন্যার সাথে নয়, বরং একজন দাসীর মেয়ের সাথে আকবরের বিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এই তথ্যটি তিনি শুনেছেন এবং নিজে পড়েননি, তবুও তার এই মন্তব্য ভারতের ইতিহাস চর্চায় নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
সেমিনারে রাজ্যপাল হরিভাউ কিষণরাও বাগদে মহারাণা প্রতাপকে ইতিহাসের বইগুলিতে আকবরের তুলনায় কম গুরুত্ব দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আকবরের আত্মজীবনীতে যোধার সাথে তার বিবাহের কোনো উল্লেখ নেই এবং মহারাণা প্রতাপ আকবরের কাছে কোনো চুক্তি লিখেছিলেন তারও কোনো প্রমাণ নেই। তার মতে, মহারাণা প্রতাপ কখনো নিজের আত্মসম্মানের সাথে আপস করেননি, যা তার মহানুভবতার পরিচায়ক।
রাজ্যপাল আরও বলেন যে, নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির মাধ্যমে এখন ইতিহাসকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতিতে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে নতুন প্রজন্ম তার গৌরবোজ্জ্বল অতীতের সাথে পরিচিত হতে পারে। তার মতে, “মহারাণা প্রতাপ এবং ছত্রপতি শিবাজি যদি সমসাময়িক হতেন, তাহলে ভারতের চিত্র ভিন্ন হত।” এই মন্তব্য দেশের বীরত্বপূর্ণ অতীত এবং তার সম্ভাব্য গতিপথ নিয়ে গভীর চিন্তার খোরাক জোগায়।
উদয়পুরে প্রতাপ গৌরব কেন্দ্রে, রাজ্যপাল মহারাণা প্রতাপের জীবন সম্পর্কিত তথ্যও সংগ্রহ করেন এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দেশপ্রেমিক নাগরিকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে বসবাসকারী গ্রামবাসীদের দেশপ্রেমকে “প্রকৃত ভারতের প্রতীক” বলে অভিহিত করেন। রাজ্যপালের এই মন্তব্যগুলি ভারতের ইতিহাস, শিক্ষা নীতি এবং জাতীয়তাবাদের ধারণাকে নতুন করে বিশ্লেষণের সুযোগ করে দিয়েছে।