Sheikh Hasina Death Penalty:শেখ হাসিনা, কামালকে মৃত্যুদণ্ড! ট্রাইব্যুনালের রায় ঘিরে বাংলাদেশ জুড়ে সংঘাতের শঙ্কা

আজ সোমবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নজিরবিহীন ও অগ্নিগর্ভ রায় ঘোষণা করল বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লিগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে (Sheikh Hasina Death Penalty) মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে পলাতক প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও। এই রায়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে চরম সহিংসতা ও সংঘাতের আশঙ্কা তীব্র হয়েছে, যার মোকাবিলায় দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে ‘রেড অ্যালার্ট’ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক মোতায়েন।

ট্রাইব্যুনালের ঐতিহাসিক রায়
ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা শুরু করেন।

শেখ হাসিনা (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লিগ সভানেত্রী): মৃত্যুদণ্ড

আসাদুজ্জামান খান কামাল (প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী): মৃত্যুদণ্ড

চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন (প্রাক্তন পুলিশ প্রধান): ৫ বছরের কারাবাস (তিনি রাজসাক্ষী হওয়ায় সাজার পরিমাণ কমানো হয়েছে)

ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, হাসিনা ও কামাল দু’জনেই পলাতক থাকায় তাঁদেরকে রায়ের কপি দেওয়া হবে না। সরকার পক্ষ, তথা মহম্মদ ইউনুস সরকার, এই মামলায় প্রথম থেকেই শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড, দাবি করে আসছিল। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে ফাঁসি অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে। একই সাথে হাসিনা ও কামালের যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করারও আরজি জানিয়েছে সরকার পক্ষ।

দেশজুড়ে রেড অ্যালার্ট ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপ 
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে মারাত্মক অশান্তির আশঙ্কায় গতকাল, রবিবার, সকাল থেকেই গোটা বাংলাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরের রাজপথ ও অলিগলিতে সেনা, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও র‍্যাবের ব্যাপক মোতায়েন করা হয়েছে। সচিবালয়, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং উপদেষ্টাদের অফিস ও বাসভবনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

শঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলেছে রবিবার রাতেই। ঢাকার সেন্ট্রাল রোড এলাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাড়ির সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। একই রাতে ঢাকার বাংলা মোটর এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির অফিসের সামনেও ককটেল বিস্ফোরণ হয়। যদিও উভয় ঘটনায় কেউ হতাহত হননি, তবে ঢাকা সহ সারা দেশে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

রাজসাক্ষীর বয়ান: সরকারের অবস্থানকে মজবুত করেছে
ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এই মামলায় প্রাক্তন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় সরকারের অবস্থান যথেষ্ট মজবুত হয়েছে। আদালতে তিনি দাবি করেছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজসাক্ষী হওয়ার কারণে তাঁর সাজার পরিমাণ কমিয়ে ৫ বছরের কারাবাস দেওয়া হয়েছে, এবং সরকার পক্ষ তাঁর কঠোর সাজা দাবি করেনি।

আওয়ামী লিগের শাটডাউন ও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবি

এই সর্বোচ্চ সাজার আশঙ্কা করেই আওয়ামী লিগ রবিবার ও সোমবার দেশজুড়ে শাটডাউন বা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়ি থেকে বের হবেন না, যাতে দেশ অচল হয়ে পড়ে। এর আগে গত ১৩ নভেম্বরও দলের ডাকে ঢাকায় সফল লকডাউনের কর্মসূচি পালিত হয়েছিল।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে জাতিসংঘের বিচার সংক্রান্ত সংস্থার কাছে হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। তাঁর আইনজীবীর বক্তব্য, ট্রাইব্যুনালের বিচার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে শুনানি করে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি মূল অভিযোগ

ট্রাইব্যুনালে সরকার পক্ষ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী পাঁচটি অপরাধের অভিযোগ এনেছিল:

আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যা ও হামলার নির্দেশ: ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা ও নাতিপুতি’ হিসেবে আখ্যা দেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা ও নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী লিগ নেতা-কর্মীরা নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ চালায়।

প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার ও গণহত্যা: হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে হাজারেরও বেশি আন্দোলনকারীকে হত্যা ও নির্মূলের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে প্ররোচনা, উসকানি ও সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে।

চাঁনখারপুলে গুলি করে হত্যা: গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকার চাঁনখারপুলে ছয়জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাসিনা ও অন্য আসামীরা।

আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর নির্দেশ: ঢাকার আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যা করা পাঁচ আন্দোলনকারীর মরদেহ এবং জীবিত একজনকে পুলিশ ভ্যানে পুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী।

রাজপথে সংঘাতের প্রস্তুতি: ইউনুস প্রশাসন বনাম বিএনপি-জামায়াত
ইউনুস প্রশাসন দেশ সচল রাখতে মরিয়া। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে যাতে কর্মীরা অফিসে উপস্থিত থাকেন। শিক্ষাঙ্গন বন্ধ না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লিগের শাটডাউন বানচাল করতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামি সহ ৮ দলের জোট রাজপথে সক্রিয় থাকার ঘোষণা দিয়েছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ঘোষণা করেছেন, “আমরা অতীতের কর্মসূচিতেও মাঠে ছিলাম, এবারও ফ্যাসিবাদের পক্ষে নাশকতার কোনো সুযোগ জাতি দেবে না… আমরা আটদল মাঠে থাকব।”

রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার কারাবরণ করলেও, শেখ হাসিনা এই প্রথম কোনো মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজার মুখোমুখি হলেন। এই রায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি এবং স্থিতিশীলতার ওপর কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।