নিজস্ব প্রতিনিধি, ব্যারাকপুরঃ রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে রাজ্য পূর্ত দফতর।বর্তমানে প্রায় ২০০০ কিমি জাতীয় সড়ক, ৩৩০০ কিমি রাজ্য সড়ক, ৭৩০০ কিমি অন্যান্য রাস্তা, ৫৪০০ কিমি গ্রামীণ রাস্তা সহ ৩০০০ ব্রীজ রক্ষণাবেক্ষণ করে পূর্ত দপ্তর। তাছাড়াও বেশ কয়েক হাজার গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিং নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে পূর্ত দপ্তর।বিভিন্ন কোভিড ও সাধারণ হসপিটাল , কোর্ট এবং স্টেডিয়াম তৈরি ও তার রক্ষণাবেক্ষণের সাথে যুক্ত রয়েছে পূর্ত দপ্তর। এছাড়াও সম্প্রতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১২০০ টি ব্রিজ সেচ দপ্তর থেকে এবং ৬০০০ কিমি রাস্তা জেলা পরিষদ থেকে পূর্ত দপ্তরের হাতে এসেছে।এই বিপুল পরিমান কাজের সফল রূপায়ণের জন্য সম পরিমাণ ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। পূর্ত দপ্তরে বর্তমানে নতুন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চিফ ইঞ্জিনিয়ার থেকে জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার পর্যন্ত যে সংখ্যায় ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন তা বর্তমানে সরকার মঞ্জুরীকৃত পদের তুলনায় অপ্রতুল ও কাজের ভারের সঙ্গে সমানুপাতিক নয়। ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলে পূর্ত দপ্তরের বাজেট বরাদ্দ প্রায় সাত গুণ বৃদ্ধি পেলেও কর্মী, ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি।
………………..Advertisement…………………
এই অসামঞ্জস্যের কথা মাথায় রেখে বর্তমান তৃণমূল সরকার গত নভেম্বর মাসে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে পূর্ত দপ্তরের পূনর্গঠনের জন্য ক্যাবিনেটে এক প্রস্তাব পাস হয়।যাতে সিভিল এবং ইলেকট্রিক্যাল শাখা মিলিয়ে জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার থেকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার পর্যন্ত প্রায় ২০০ টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। এছাড়াও পূর্ত দপ্তরের বর্তমান তিনটি জোন বদলে পাঁচটি জোন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাথে ব্রিজ গুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি পৃথক “ব্রিজ ডাইরেকটোরেট” তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সাম্প্রতিককালে নজরদারির অভাবে কয়েকটি ব্রিজ ভেঙে পড়া ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার বেহাল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই পুনর্গঠন অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় বলে মনে করছিল ওয়াকিবহাল মহল। পূর্ত দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পুনর্গঠন এর ফলে যে নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে তাতে সরকারের অতিরিক্ত অর্থব্যয় হবার কোনো অবকাশ নেই । কেননা রোড মজদুর, গ্যাং মজদুর , রোড মেটের মতো বিপুল পরিমাণ কয়েকটি নিষ্ক্রিয় পদ বিলুপ্তির মাধ্যমে এই নতুন পদগুলোর অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পূর্ত দপ্তর সূত্রে আরো জানা গিয়েছে, যে এই নতুন পূনর্গঠনের জন্য রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত খরচের বদলে অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। পুনর্গঠন এর ফলে নতুন অফিস তৈরীর খরচও পূর্ত দপ্তরের বাজেট বরাদ্দের মধ্য থেকেই করা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, এই লকডাউন এর মধ্যেও পুনর্গঠন সম্পর্কিত সমস্ত কাজ চলছিল।কয়েকটি নতুন অফিস তৈরি ও কয়েকটি স্থানান্তর এর কাজও প্রায় সম্পূর্ণ। নতুন অফিস গুলির প্রধানদের “ডিডিও কোড” দিয়ে দেওয়া হয়েছে। দপ্তর পুনর্গঠন এর শেষ সময় সীমা মার্চ থেকে অগস্ট অবধি বাড়ালেও তা সুসম্পন্ন হয়নি। দফতর পুনর্গঠন এর এই প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার আবেদন জানিয়ে গত পয়লা সেপ্টেম্বর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লেখে “স্টেট ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন”। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে গত ৪ই সেপ্টেম্বর পূর্ত দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব এক আদেশনামা বলে (1112-E/PWD-11041/1/2020 – Roads ) এই পুনর্গঠন এর প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। এর ফলে কোচবিহার থেকে সুন্দরবন সমস্ত পূর্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার-অফিসার ও কর্মী মহলে ক্ষোভ ও হতাশার ছায়া নেমে এসেছে। কাজের বোঝা বৃদ্ধির বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া তাদের ক্ষোভের মূল কারণ।
এই সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্টেট ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নীলাঞ্জন সাহা বলেন ” সরকারের উন্নয়নমুখী কাজ দ্রুত রূপায়নের স্বার্থেই এই পুনর্গঠন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। তাই আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হোক। এ ব্যাপারে আমরা সরকারকে সবরকম সহযোগিতা করতে রাজি আছি। এর সাথে আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো, অবসরের পর আর কাউকে যেন কোন পদে এক্সটেনশন না দেওয়া হয় ও কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারদের যথাসময়ে পদন্নতির ব্যবস্থা করা হয়”।