গত শনিবার রাতে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে ঘর বাড়ি ভাংচুর এবং আগুন, কার্ত্তিক পুজার প্যান্ডেলে আগুন, (Suvendu on Beldanga)বাড়ি বাড়ি ঢুকে মারধোর চলে। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। আজও এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। প্রশাসনের তরফ থেকে মুর্শিদাবাদ জেলাজুড়ে সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় এক পুজো কমিটির সভাপতি ও সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছে। হিংসা-ভাঙচুরের ঘটনায় সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৭ জনকে। জেলার কোথাও কারও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ৬ জন আহত হয়েছেন, তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল। জেলাজুড়ে কড়া পুলিশি নজরদারি চলছে।
প্রসঙ্গত,মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যে কোনও রকমের অশান্তি হতে পারে। তখনই জানিয়েছিলেন, অশান্তির চেষ্টা হলে পুলিশ কড়া হাতে নিজের কাজ করবে। এ রাজ্যে কোনও অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। সেইমত বেলডাঙার (Suvendu on Beldanga)ঘটনায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব। তিনি মাইকিং করে দুই পক্ষকে সতর্ক করেন। রাত থেকে বেলডাঙার বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করা হয় পুলিশ।
গতকাল রবিবার বেলডাঙার (Suvendu on Beldanga)ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তরফ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছিল, দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়েছিল সেখানে। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। পাশাপাশি এই সংঘর্ষ নিয়ে গুজব রটানোর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিল পুলিশ। এই আবহে এবার পুলিশকে পালটা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করলেন বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। পুলিশের উদ্দেশ রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তিনি (Suvendu on Beldanga)।
পুলিশের উদ্দেশে শুভেন্দু অধিকারী নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, ‘যে ‘দুই গোষ্ঠী’ সংঘর্ষে জড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন, তাদের পরিচয় প্রকাশ করার সৎ সাহস কি আছে? এবং কোন ‘নিন্দনীয় দুষ্টুমি’র কথা এখানে বলা হচ্ছে? আরও একটা কথা, সংঘর্ষ অর্থ দুই পার্টি একে অপরের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক আক্রমণ করে। তবে বেলডাঙায় তো একটি নির্দিষ্ট পার্টি অপর গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালিয়ে গিয়েছে। সেই একটাই গোষ্ঠী দাঙ্গা চালিয়েছে, হামলা করেছে, ভাঙচুর করেছে, আগুন ধরিয়েছে; হিন্দুদের বাড়ি এবং সম্পত্তিতে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং মুর্শিদাবাদের এসপি-র উদ্দেশে আমার প্রশ্ন, আপনারা দাবি করছেন যে কেউ নিহত হয়নি বলে আপনারা সফল; কিন্তু লুটপাট এবং ভাঙচুরের ঘটনার কী? যাদের আপনারা রক্ষা করতে ব্যর্থ হলেন, তাদের কী?’
Do you have the guts to reveal the identity of the ‘two groups’ who clashed over ‘some condemnable mischief’?
Also, clash means a violent confrontation between two parties, but what happened in Beldanga is at the best can be described as a concerted attack by one party on the… https://t.co/FwklnDa7GB pic.twitter.com/AuW9VnoLJs— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) November 18, 2024
এরপর শুভেন্দু অধিকারী আরও লেখেন, ‘মনে হচ্ছে আপনারা অপপ্রচারকারীদের নিয়েই বেশি চিন্তিত। তবে যারা ভাঙচুর চালাল, যারা আইন ভাঙল, যারা দাঙ্গা করল, তাদের বিষয়ে আপনারা নরম। এবার ‘নিন্দনীয় দুষ্টুমি’র বিষয়ে আসা যাক। কেউ যদি অপরাধ করে থাকে, তাহলে কেউ তাদের রক্ষা করতে চায় না। এবং তাদের আইনত উচিত সাজা হওয়া উচিত। দাঙ্গাবাজদের ইচ্ছে মতো সাজা হতে পারে না। তদন্ত না করে ‘নিন্দনীয় কাজে’র কথা বলবেন নাষ আমরা সবাই দেখেছি গতবছর বাংলাদেশে কী হয়েছে। সেই সময় সেখানে এই ধরনের ‘দুষ্টুমি’ করেই শতাধিক মণ্ডপে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। তবে যখন সত্যিটা সামনে এল, তখন দেখা গেল, সনাতনীদের বদনাম করতে ইচ্ছে করে সেই সব ঘটানো হয়েছিল। তাই এখানেও এমনটা হতেই পারে।’
এদিকে একজন ব্যক্তির ভিডিয়ো পোস্ট করে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu on Beldanga)লেখেন, ‘আমি অনুরোধ করব, হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসায় উস্কানি দেওয়া এই ‘ভদ্রলোককে’ যেন গ্রেফতার করা হয়। তিনি আবার মানুষ খুন করারও হুমকি দিচ্ছেন।’ উল্লেখ্য, এর আগে রবিবার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তরফে বলা হয়েছিল, ‘মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় গত রাতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে কয়েকটি অংশের তরফে ভুয়ো তথ্য এবং গুজব ছড়ানোর যে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচেষ্টা চলছে, সেটা নিন্দনীয়। (গত রাতে) বেলডাঙায় দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। যেখানে সেই ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার কমিটির সভাপতি এবং সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ১৭ জনকে গ্রেফতার করে ভাঙচুর এবং হিংসার ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করেছে।’ সেইসঙ্গে পুলিশের তরফে আরও বলা হয়েছিল, ‘জেলার কোথাও কোনও প্রাণহানি হয়নি। ছয়জন আহত হয়েছেন এবং তাঁদের উপযুক্ত চিকিৎসা হচ্ছে। যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের সকলের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে। (পুরো পরিস্থিতির উপরে) পুলিশ কড়া নজর রেখেছে। শান্তি বিঘ্নিত করতে যাচাই না করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় যে তথ্য এবং পরিসংখ্যান ছড়ানো হচ্ছে, তাতে দয়া করে কান দেবেন না। যারা আইন ভেঙেছে এবং যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’