৫০ ওভার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগানের অবসরের দুই বছর হয়ে গেল। জস বাটলারও ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কত্ব করছেন দুই বছর ধরে। তাঁর নেতৃত্বে ইংল্যান্ড দুটি বিশ্বকাপও খেলে ফেলেছে- একটি টি-টোয়েন্টি (T20 World Cup), আরেকটি ওয়ানডের বিশ্বকাপ। একটিতে ইংল্যান্ড হয়েছে চ্যাম্পিয়ন, আরেকটিতে সপ্তম।
মরগানের অবসরের কয়েক মাস পরেই অস্ট্রেলিয়ায় ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে তোলেন বাটলার। কিন্তু সেই দলটা আসলে কতটা বাটলারের ছিল? সেবার দলে ছিলেন বেন স্টোকসের মতো তারকা। লম্বা বিরতির পর বিশ্বকাপ দিয়ে ফিরেই দারুণ খেলেছেন অ্যালেক্স হেলস। মার্ক উড, স্যাম কারেন, আদিল রশিদ, মঈন আলী—নামগুলো তো মরগানের দলেরই চেহারা ফুটিয়ে তোলে!
অবশ্য সাদা বলের ক্রিকেটকে বদলে দেওয়া এই দল নিয়েও গত বছরের অক্টোবরে ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি ইংল্যান্ড। টুর্নামেন্ট শেষ করে ৯ ম্যাচে মাত্র ৩ জয় নিয়ে ৭ নম্বর দল হিসেবে। ইংলিশ সমর্থকেরা তখন নিশ্চয়ই মরগানের ‘গুড ওল্ড ডেজ’ রোমন্থন করছিলেন। আহা, কী সময়টাই না ছিল ইংলিশ ক্রিকেটের! সাদা দলের ক্রিকেট মানেই ইংলিশদের চূড়ান্ত আধিপত্য।
বাটলারদের জন্য আবারও সেই সময়টা ফিরিয়ে আনার সুযোগ নিয়ে এসেছে আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (T20 World Cup)। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে সফল হলে নিশ্চয়ই এই দলটা মরগানের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসবে, সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠবে ‘বাটলারের দল’।
সেটি হলে বাটলার নাম লেখাবেন দুবার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কদের তালিকায়। ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরের শিরোপা জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড অধিনায়ক হিসেবে দুবার বিশ্বকাপ জিতেছেন। ২০০৩ ও ২০০৭ সালে তাঁর পাশে বসেছেন অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং। লয়েডের পদাঙ্ক অনুসরণ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও দুবার বিশ্বকাপ জিতেছেন স্বদেশি ড্যারেন স্যামি। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শিরোপা জয়ের পর ২০১৬ সালে ভারতে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি জিতেছে স্যামির দল। ২৯ জুন বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে যদি ২০২২ সালের মেলবোর্ন ফিরে আসে, তাহলে স্যামির পাশে বসবে বাটলারের নাম।
সেই ব্রিজটাউনেই আজ স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করবে ইংল্যান্ড। লিগ পর্বে তাদের সব ম্যাচই ওয়েস্ট ইন্ডিজে। বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৩টি ওয়ানডে ও ৫টি টি-টোয়েন্টির দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে ইংল্যান্ড। বাটলাররা দুটি সিরিজ হারলেও কোন মাঠে কেমন কন্ডিশন থাকতে পারে, তা তাদের ভালোই জানা। সঙ্গে সাদা বলের ক্রিকেটারদের সিপিএল অভিজ্ঞতা তো আছেই। অনুপ্রেরণার দরকার হলে ইংলিশ ক্রিকেটাররা ২০১০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকেও তাকাতে পারেন। ক্যারিবীয় কন্ডিশনে হয়ে যাওয়া সর্বশেষ সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিরোপা জিতেছিল পল কলিংউডের দল।
কিন্তু এবার বাটলাররা পারবেন তো? গত অক্টোবরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের বিবর্ণ পারফরম্যান্সই প্রশ্নটার জন্ম দিচ্ছে। বাটলার অবশ্য সেই নেতিবাচক অভিজ্ঞতার শিক্ষাই কাজে লাগাতে চান এবার। স্কাই স্পোর্টসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘গত বিশ্বকাপে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যোগাযোগের ঘাটতি ছিল, পরিস্থিতি ঘোলাটে ছিল। এটা আমার অধিনায়কত্বের জন্য বিরাট শিক্ষা। আমি দলের সবাইকে স্বাধীনতা দিতে গিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাই না। খেলোয়াড়েরা স্বাধীনভাবে খেলতে চাইবে। আপনি চাইবেন না তাতে খুব একটা বাধা দিতে। কিন্তু যোগাযোগ কমিয়ে দেবেন না। যখন দরকার, তখন যেন প্রয়োজনীয় যোগাযোগটা দলের মধ্যে থাকে, যেন সবার দায়িত্বের ব্যাপারে সবার স্পষ্ট ধারণা থাকে।’
অতীতকে পেছনে ফেলে বাটলার এখন তাকাতে চান সামনে, ‘সেই বিশ্বকাপ আমাদের জন্য হতাশার ছিল। আমাদের গর্বে ধাক্কা লেগেছিল, আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লেগেছিল। তবে সময় থেমে থাকে না। আপনাকেও এগিয়ে যেতে হবে। এখন আমাদের সামনে রোমাঞ্চকর সময় অপেক্ষা করছে।’
বিশ্বকাপ জিততে কী দরকার, সেটা বাটলারদের ভালোই জানা। ২০১৯ সালে ঘরের মাঠে প্রায় একই দল নিয়ে ইংল্যান্ড শিরোপা জিতেছে, ২০২২ সালেও তাই। এবারও দলের প্রতি বাটলারের বার্তা একই, ‘দলে অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। ওদের বলার প্রয়োজন নেই টি-টোয়েন্টি কীভাবে খেলতে হয়। টুর্নামেন্টে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে ভালো খেলতে হবে। আমরাও সে চেষ্টাই করব।’