আবু আলী,ঢাকা : ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার সুগন্ধা ও ইনানী বিচসহ অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাগম হয়েছে। আর এই সুযোগে ঈদ-পরবর্তী আশানুরূপ পর্যটক আসায় ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
ঈদের চতুর্থ দিন বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে অসংখ্য পর্যটকের ভিড়। সৈকতের অন্য পয়েন্টগুলোতেও দেখা গেছে ব্যাপক আনন্দ-উচ্ছ্বাসে পর্যটকরা সময় কাটাচ্ছেন। কেউ গা ভেজাচ্ছেন সমুদ্রের নোনাজলে। কেউ বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা এলাকার হোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি হোটেলে ৫০ থেকে ১২০ জন করে পর্যটক অবস্থান করছেন। ১২ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ছয় দিন ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ হোটেল-গেস্ট হাউস কক্ষে তারা থাকবেন। পর্যটক টানতে হোটেল-গেস্ট হাউসগুলোতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, গত শনিবার পর্যন্ত হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসগুলোর প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কক্ষ খালি ছিল। তবে রোববার কিছুটা চিত্র পাল্টে যায়। এখন অনেকটাই লোকারণ্য সৈকত। আমরা আশা করছি, আগামী কয়েক দিন কিছুটা সমাগম বাড়বে।
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান সমুদ্র জানান, সকাল ১০টার পর থেকে সমুদ্রসৈকতে নামতে শুরু করে দর্শনার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে চারদিক। বিকেলের দিকে তা আরও বাড়তে পারে।
তিনি আরও জানান, সৈকতে ঘুরে বেড়ানো দর্শনার্থীদের অধিকাংশই স্থানীয় লোকজন। তারা ঈদ উপলক্ষে মনের প্রশান্তির জন্য বেড়াতে ছুটে আসেন দীর্ঘতম এ সৈকতে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে দূর-দূরান্তের পর্যটকদের সমাগম ঘটবে কক্সবাজারে।
কক্সবাজার লাবণী পয়েন্ট ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হাবিবুর রহমান জানান, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো চাঙা হয়ে উঠেছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে কিছুটা ব্যবসা শুরু হয়েছে। এখন ব্যবসা কিছুটা জমে উছেঠে। আশা করছি আগামী কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। দুপুরে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে আসেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান (৫০)। প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে না পেরে তারা প্রথমে বিশ্রাম নেন। কিছুক্ষণ পর তারা সৈকতের লোনাজলে নামেন শীতল হতে।
তিনি বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন কয়েকজন করে মারা যাচ্ছেন। যেকোনো মুহূর্তে বিধিনিষেধ আরোপ হতে পারে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিও ভালো না। তাই আগেভাগে ছুটি কাটাতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ছুটে এসেছি। বৃহস্পতিবার রাতের বাসে ঢাকায় ফিরে যাব।
রংপুর থেকে আসা সাইফুল ইসলাম (৪৫) সমুদ্রের টানে স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে কক্সবাজার ছুটে এসেছেন। উঠেছেন কলাতলীর একটি হোটেলে। ৫০ শতাংশ হোটেল কক্ষ ভাড়া ছাড় পাওয়ায় আরও এক দিন বেশি থাকবেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল দুপুরে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ যাবেন। সেখানকার মিয়ানমার সীমান্ত, ঐতিহাসিক প্রেমকাহিনির মাথিনকূপ, নাফ নদের বুকে জেগে ওঠা জালিয়ারদিয়া, ন্যাচার পার্ক দেখে টেকনাফ থেকেই রাতের বাসে ঢাকায় ফিরে যাবেন তারা।
কক্সবাজার সৈকতে দায়িত্বরত বিচ কর্মীদের দলনেতা মাহবুবুর রহমান জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সুখককর ও স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণসহ সার্বিক বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। কোনোভাবে যাতে সমস্যা না হয়। আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, যথারীতি কোনো পর্যটক যেন এখানে এসে হয়রানির শিকার না হয়, ভ্রমণের ভালো স্মৃতি নিয়ে যেন ফিরতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি।