উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ
আবু আলী, ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।শনিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন ‘এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আর্থিক এবং অন্যান্য সূচকগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। ২০০৮-০৯ বছরে জিডিপি’র আকার ছিল মাত্র ১০৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০ সালে তা ৩৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই ১২ বছরে সরকারি ব্যয় ৪.৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৭ হাজার ৯৬০ কোটি থেকে ২০১৯-২০ বছরে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা হয়েছে। ২০০৮-০৯ বছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১৫.৫৭ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৮-১৯ বছরে তা ৪০ দশমিক পাঁচ-চার বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি পায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ গতকাল স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, ‘আমি এই অর্জনকে উৎসর্গ করছি আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মকে। যারা আজকের বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।’
তিনি বলেন, ‘সমগ্র জাতির জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। আমাদের এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি; আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্র্তিতে তারই হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করলো।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ কৃতিত্ব এ দেশের আপামর জনসাধারণের। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি। এই শুভ মুহূর্তে আমি দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে, জনগণের একজন নগণ্য সেবক হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি।
‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ববঙ্গ শুধু অবহেলিতই ছিল না, এখানকার সম্পদ নিয়ে গিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছিল। শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের জন্য ব্যয় করা হতো ২৫-৩০ ভাগ সম্পদ। আর পশ্চিম পাকিস্তানের ৪৪ শতাংশ জনগণের জন্য ৭০-৭৫ ভাগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এই বৈষম্য এবং শোষণের বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম সোচ্চার হন। শুরু করেন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলন। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এবং ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু, পাকিস্তান পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশের সব অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়ে যায়। রাস্তা-ঘাট নেই, রেললাইন-ব্রিজ-কালভার্ট ধ্বংসপ্রাপ্ত, সমুদ্রবন্দর-নদীবন্দর অচল, কলকারখানা বন্ধ, অফিস-আদালত ধ্বংস। একটা প্রদেশের প্রশাসনকে তিনি অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে একটা স্বাধীন দেশের উপযোগী করে একেবারে শূন্য হাতে দেশের পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। ভারত থেকে ফিরে আসা এক কোটি শরণার্থীসহ দেশের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষকে পুনর্বাসন করেন। শহীদ পরিবার, নির্যাতিত পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা, ঘরবাড়ি হারানো সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৭ শতাংশ অতিক্রম করে। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী কুচক্রীরা তাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার মাধ্যমে শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই ধ্বংস করেনি, তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়। এর প্রমাণ আপনারা দেখেছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের একুশ বছরে। তখন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল বন্যা-খরা, দুর্যোগ, ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে। বার্ষিক বাজেটের একটা বড় অংশ আসতো বিদেশি সাহায্য থেকে। খাদ্যের জন্য বিদেশি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকত ৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো। গ্রামগুলো ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। গ্রামের মানুষের দিকে তাকানোর কেউ ছিল না। যোগাযোগের জন্য রাস্তা ছিল না, বিদ্যুৎ ছিল না, মানুষের হাতে কাজ ছিল না। অনাহারে, অর্ধাহারে মানুষ দিন পার করত। সারাদিন মজুরি খেটে ২ সের চালও জুটতো না।
তিনি বলেন, ৬ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর আমি ব্যাপকভাবে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা সফর করি। আমি সে সময়ই প্রতিজ্ঞা করি যদি কোনদিন আল্লাহ আমাকে সুযোগ দেন দেশ পরিচালনার, তাহলে গ্রামোন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেব। গ্রামের মানুষের উন্নয়নে কিছু করবো। তখন ৭০-৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করত। আমার মনে হয়েছিল এদের যদি দারিদ্রমুক্ত করতে পারি, তাহলেই বাংলাদেশ দারিদ্রমুক্ত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে জনগণের রায় নিয়ে আমি প্রথমবার সরকার গঠন করে আমার চিন্তা-চেতনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। নতুন নতুন পরিকল্পনা, কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রবর্তনের মাধ্যমে গরীব, প্রান্তিক মানুষদের সরকারি ভাতার আওতায় নিয়ে এসেছি। কৃষি উৎপাদনের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণ করেছিলাম। মাঝখানে ৫ বছর বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় ছিল। তারা কী করেছিল আপনারা জানেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নিয়ে আমরা অব্যাহতভাবে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আজকের যে অর্জন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, তা আমাদের বিগত ১২ বছরের নিরলস পরিকল্পনা, পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টার ফসল। দেশের মানুষই এসব করেছেন। আমরা সরকারে থেকে শুধু নীতি-সহায়তা দিয়ে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা- এই তিনটি সূচকেরভিত্তিতে জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডই খুব ভালোভাবে পূরণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর অনুষ্ঠিত ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ পুনরায় সকল মানদণ্ড অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পূরণের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করল।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের পর্যালোচনায় ২০১৯ সালে মাথাপিছু আয়ের মানদণ্ড নির্ধারিত ছিল ১ হাজার ২২২ মার্কিন ডলার। ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৮২৭ ডলার। আর বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ মানদণ্ডের প্রায় ১.৭ গুণ। মানবসম্পদ সূচকে নির্ধারিত মানদণ্ড ৬৬-এর বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন ৭৫.৪। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে উত্তরণের জন্য মানদণ্ড নির্ধারিত ছিল ৩২ বা তার কম। কিন্তু ওই সময়ে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৭।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দারিদ্র্য, ক্ষুধা, নিরক্ষতামুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৮-০৯ বছরের ৭ দশমিক চার-সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪৪ দশমিক শূন্য-তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০১ সালে আমাদের দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮.৯ শতাংশ এবং হত-দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪.৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২০.৫ ভাগ এবং হত-দারিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশে।
তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ং-সম্পূর্ণ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য় এবং মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও স্বয়ং-সম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯-১০ বছরে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ছিল মাত্র ৫,২৭১ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু ২০০৯-১০ বছরের ৬৯ দশমিক ছয়-এক বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৭২.৬ বছর। ২০০৯-১০ বছরের তুলনায় ৫-বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে ২৮। মাতৃমৃত্যুর হার কমে দাঁড়িয়েছে লাখে ১৬৫ জনে যা ২০০৯-১০-এ ছিল ২৮০ জন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় ’ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর সুবিধা আজ শহর থেকে প্রান্তিক গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ এর সুবিধা কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল গৃহহীনদের ঘর প্রদান কর্মসূচির আওতায় ৮ লাখ ৯২ হাজার গৃহহীনকে ঘর প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার গৃহনির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৬ পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে চলতি বাজেটে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা বাজেটের ১৬ দশমিক আট-তিন শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক শূন্য-এক শতাংশ। উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি, উপবৃত্তি প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ স্বাবলম্বী। জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ৭ম। করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে ২০২০ সাল শুধু আমাদের জন্য নয় গোটি বিশ্বের জন্য ছিল সংকটময়। এ মহামারিতে যাদের মৃত্যু হয়েছে আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি। আমরা ইতোমধ্যে টিকা প্রদান শুরু করেছি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জনকে প্রথম ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে এখন পর্যন্ত আমরা ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা মোট জিডিপি’র ৪.৪৪ শতাংশ।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে। আমাদের এ অর্জনকে সুসংহত এবং টেকসই করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এটি একটি বিশেষ ধাপ। ইতোমধ্যে আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। টেকসই উত্তরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশল এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এগুলোর কতগুলি এ বছর বা আগামী বছরের শুরুতে চালু হবে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া সারা দেশে একশত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এসব বাস্তবায়ন হলে কর্মসংস্থান তৈরিসহ আমাদের অর্থনীতিতে আরও গতি সঞ্চার হবে।
সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন. বাঙালি বীরের জাতি। মাত্র নয় মাসে আমরা আমাদের স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ। দলমত নির্বিশেষে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করি।