নিউজ ডেস্ক,খবর এইসময়ঃ দৌড় থেমে গেল ‘ফ্লাইংশিখ’ মিলখা সিংয়ের। মাসখানেক হল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। করোনা আক্রান্ত হয়ে। দিন কয়েক আগে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যার জন্য। গতকালও চিকিৎসকদের টিম জানিয়েছিল, তাঁর অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। সেই মিলখা সিং মারা গেলেন শুক্রবার গভীর রাতে। ৯১ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর।
করোনার প্রভাবে গত একবছরে মারা গিয়েছেন অনেক প্লেয়ার। মিলখার প্রয়াত হওয়া সেই সব শোককে আরও উস্কে দিল। ভারতীয় খেলাধুলোয় মিলখার নাম চিরস্মরণীয়। অলিম্পিক নিয়ে ভারতীয়দের স্বপ্ন তৈরি হওয়ার অনেক আগেই আকাশ ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটারে চতুর্থ হয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত অলিম্পিকের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ওটাই সেরা পারফরম্যান্স ভারতের। যে কারণে তাঁকে আদর করে ডাকা হত ‘ফ্লাইং শিখ’।
মাত্র পাঁচ দিন আগে করোনাতে ভুগেই মারা গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী নির্মল। তার পর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি শুরু হয় তাঁর। তবে ডাক্তারদের তরফে সবরকম চেষ্টা করে হচ্ছিল। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও খোঁজ রেখেছিলেন তাঁর। সেই মিলখা মারা যাওয়ায় ভারতীয় খেলাধুলোয় শোকের ছায়া।
মিলখার পরিবারের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উনি লড়াই করছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন। এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত শোকের সময়।’ ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকে অংশ নিলেও কিছুই করতে পারেননি। প্রস্তুতি ঠিকঠাক না থাকায়। দু’বছরের মধ্যে নিজেকে তৈরি করে ফেলেছিলেন। ১৯৫৮ সালে কার্ডিফ কমনওয়েলথ গেমসে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মিলখা। ৪৪০ মিটার সোনা জিতে। সেটাই ছিল স্বাধীন ভারতে কোনও ভারতীয় অ্যাথলিটের প্রথম সোনা জয়। সেটাই বোধহয় তাঁর স্বপ্ন আর বিশ্বাস তৈরি করে দিয়েছিল। অলিম্পিকে সোনা জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। ১৯৫৮ সালেই টোকিও এশিয়ান গেমসে ২০০ ও ৪০০ মিটারে সোনা জিতেছিলেন। ১৯৬২ সালের জাকার্তা এশিয়াডেও ছিল জোড়া সোনা।
মিলখাকে ভারত তো বটেই, সারা বিশ্ব মনে রেখেছে ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকের জন্য। ৪০০ মিটার রেসের ফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। ওটিস ডেভিস, কার্ল কফমানদের পাশে সমান উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ হয়েছিলেন ফেভারিট মিলখা। তবে ভারতীয় অ্যাথলিটকে সে দিন চিনে নিযেছিল সারা বিশ্ব। ৪৫.৭৩ সেকেন্ডে মিলখার ওই দৌড় অনেক দিন জাতীয় রেকর্ড হিসেবে অক্ষুন্ন ছিল।
১৯২৯ সালের ২০ নভেম্বর জন্ম মিলখার। পাকিস্তানের গোবিন্দপুরায়। দেশ ভাগের সময় দাঙ্গায় পরিবারের অনেকেই মারা যান। পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসেন দিদির কাছে। উদ্বাস্তু শিবিরে থাকেন বেশ কিছুদিন। সেনাবাহিনীতে চাকরির চেষ্টা করতে করতে অ্যাথলিট হয়ে ওঠা তাঁর। সেনাবাহিনীরই কোচের নজরে পড়ে যান। সেখান থেকেই ঘুরে যায় মিলখার জীবন।
মিলখা মানে শুধু এক ভারতীয় অ্যাথলিট নন। মিলখার মধ্যে দিয়েই প্রথম খেলার জগতে সাফল্যের খোঁজ শুরু। একসময় স্পোর্টস আইকন হয়ে উঠেছিলেন দেশের। সেই মিলখার প্রয়ানে যেন একটা যুগের অবসান হল আজ।