মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন বাণিজ্য কৌশল হিসেবে পারস্পরিক শুল্ক (Trumps Reciprocal Tariffs) আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা একদিকে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে হলেও অন্যদিকে অনিশ্চয়তা ও বাণিজ্য সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ট্রাম্পের দাবি, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ১ ট্রিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় হবে, কিন্তু অনেক বিশ্লেষক মনে করেন যে এটি একটি অবাস্তব লক্ষ্য এবং এর ফলে মার্কিন অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে ট্রাম্প জানিয়েছেন, যখন কোনো দেশ মার্কিন পণ্যে শুল্ক (Trumps Reciprocal Tariffs) আরোপ করবে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তার বিপরীতে ওই দেশ থেকে আসা পণ্যের উপর একই পরিমাণ শুল্ক আরোপ করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ভারত মার্কিন গাড়ির উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তবে আমেরিকা ভারতের গাড়ির উপরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
এই পদ্ধতিতে ট্রাম্প আশা করছেন যে দেশগুলো শুল্কের চাপ কমানোর জন্য চুক্তি করবে এবং তাদের বাণিজ্য নীতি পুনরায় পর্যালোচনা করবে। তবে, সমালোচকরা বলছেন যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে এবং শুল্কের পরিমাণ এত বেশি হতে পারে যে তা আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, ১ ট্রিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করতে হলে শুল্কের পরিমাণ খুব বেশি হতে হবে, যা আমদানির পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে এবং ফলস্বরূপ শুল্ক থেকে আয়ের প্রত্যাশা মেটাতে পারবে না। এছাড়াও, একাধিক শুল্কের ব্যবস্থা চালু হলে বাজারে বিভ্রান্তি তৈরি হবে, কারণ এক পণ্যের জন্য বিভিন্ন দেশের ওপর আলাদা আলাদা শুল্ক আরোপ করা হবে। যেমন, ভারতের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক থাকতে পারে, কিন্তু চীনের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকতে পারে। এতে আমেরিকান ব্যবসার জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।
এছাড়াও, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, অ-শুল্ক বাধা ও ভ্যাটসহ অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলোও ট্রাম্পের শুল্ক গণনায় প্রভাব ফেলতে পারে। এটি মার্কিন ব্যবসাগুলির জন্য আরও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, কারণ তারা নিজেরাই শুল্কের পরিবর্তিত হার ও আমদানির অস্থিরতার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবে না।
মোট কথা, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা হয়তো অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা হলেও এটি কার্যকর হলে বিশ্ব বাণিজ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং মার্কিন ব্যবসা ও জনগণের জন্য দীর্ঘমেয়াদে অনিশ্চয়তা বাড়াতে পারে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন আশা করছে যে দেশগুলো এই চাপের মধ্যে নিজেদের বাণিজ্য নীতি পরিবর্তন করবে এবং শুল্ক কমাতে নতুন চুক্তি করবে।