সৌভিক সরকার, বিধাননগরঃ গত মার্চ মাসে ভারতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে, ভারতবর্ষে চীনের মতো করোনা ভাইরাসের কারণে ভারতবাসীকে মরতে না হয় কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেন। ২৩ শে মার্চ থেকে দেশে শুরু হয় লকডাউন, প্রথম দিকে কিছু রাজ্য লকডাউনের গুরুত্ব না দেবার কারণে সে সব রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তে থাকে সাথে বাড়তে শুরু করে মৃতুর সংখ্যাও।
কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন রাজ্য বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দেয় কল কারখানা এবং অফিস। লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় কারখানা, অফিস, বাজার এবং ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। কোম্পানি এবং কারখানা বন্ধ হয়ে যাবার ফলে সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা কর্মচ্যুতর সাথে গৃহহারা হয়ে যায়৷
ভিন রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকরা সেখানকার রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন লকডাউন মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের বাসস্থান এবং অন্নসংস্থানের ব্যাবস্থা করে দিতে, লকডাউনের কারণে যাতায়াত ব্যাবস্থা বন্ধ হয়ে যাবার কারণে তারা নিজ রাজ্যে ফিরতে পারছে না কিন্তু সে রাজ্যের সরকার ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের দায়িত্ব নিতে রাজী না হওয়াতে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে, পন্যবাহী ট্রাকে বেশী পয়সা খরচ করে নিজের রাজ্যে ফিরে।
পশ্চিম বর্ধমান জেলাতে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৭৫ হাজার শ্রমিক জেলাতে ফিরেছেন। পশ্চিম বাংলার মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকদের নির্দেশ দেন পরিযায়ী শ্রমিকদের দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন কারখানায় নিয়োগের ব্যাবস্থা করে দিতে। মূখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাবার পর বিভিন্ন কারখানার মালিক, ক্ষুদ্র শিল্পের মালিকদের নিয়ে এবং কিছু পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কর্মশালা করলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলাশাসক।
জুলাই মাসে কর্মশালাতে ৭৫ হাজার শ্রমিকদের মধ্যে গুটি কতক শ্রমিকদের নিয়োগ করা হয় এবং বাকীদের নাম নথিভুক্ত করতে বলা হয়। আনলকডাউন শুরু হলে কিছু কারখানা খুললেও বিভিন্ন অজুহাতে নিয়োগপত্র পাওয়া দক্ষ শ্রমিকদের কাজে নেওয়া হয় নি বলে অভিযোগ। আর্থিক সচ্ছলতার কারণে শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে কাজ করতে গেছিল করোনা ভাইরাসের কারণে তারা কর্মহারা, তাদের আশা ছিল তাদের রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী কাজের ব্যাবস্থা করে দেবেন।
কিন্তু তাদের ভুল ভাঙ্গল যখন দেখলো অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিম বাংলাতেও তাদের দায়িত্ব নিতে রাজী নয়। শ্রমিকরা সংসার চালাবার জন্য সবজি, মাছ, স্যানিটাইজার, মাস্ক সহ রকমারি জিনিস নিয়ে পায়ে হেঁটে গলিতে বিক্রি শুরু করে এবং অন্যদিকে তাদের পুরনো কারখানা ও কোম্পানির সাথে যোগাযোগ রাখতে শুরু করে। আনলকডাউন শুরু হতেই কিছু রাজ্যে কারখানা খুলতে শুরু করে আশার বুক বেঁধে মালিকদের সাথে কথা বলে আবার ভিন রাজ্যে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় শ্রমিকরা।
ভিন রাজ্যের কিছু কারখানার মালিক দক্ষ শ্রমিকদের ফিরে যেতে বলাতে শেষ সম্বল খরচ করে প্লেনে করে ফিরে যেতে দেখা গেল অন্ডালের বিমানবন্দরে। সামসুল হক, রঞ্জিত যাদব, অনিল শর্মা, ব্রিজেশ রামের মতো কয়েকজন শ্রমিক জানায় তারা গুজরাটের কারখানায় কাজ করে মালিক তাদের ফিরে যেতে বলাতে তারা ফিরে যাচ্ছে, পশ্চিম বাংলার সরকার তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এই রাজ্যের শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজ করতে হবে না তাদের এই রাজ্যে বিভিন্ন কারখানায় নিয়োগ করা হবে কিন্তু প্রায় তিন মাস আগে নাম নথিভুক্ত করলেও কোন খবর না আসাতে তারা আবার পুনরায় ফেরৎ যাচ্ছে।