২০২৫ সালের রাজ্য বাজেট (WB Budget 2025) পেশ করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে একাধিক বার আক্রমণ করেছেন। সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা ভোট দেখে বাজেট করি না, আমাদের বাজেটের লক্ষ্য শুধু মানুষের উন্নয়ন।” মমতার এই মন্তব্য, কেন্দ্রের বাজেটের সমালোচনা করে, বিশেষভাবে তাদের ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও সেগুলো কার্যকর না করার বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত ছিল।
মমতা আরও বলেন, “কেন্দ্রের বাজেটের পরিভাষা ভোট মিটলে জনগণের কথা ভুলে যায়, কিন্তু আমরা এভাবে কাজ করি না। আমরা মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করি এবং এটি আমাদের বাজেটে স্পষ্ট দেখা যায়।” তিনি কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও বাংলার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু রাখার কথাও উল্লেখ করেন, যেমন আবাস যোজনার মতো প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদাহরণ দেন।
বাজেটের বড় ঘোষণা
রাজ্য বাজেটের অঙ্ক রয়েছে ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ১৯৪.০৯ কোটি টাকা, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা হয়েছে। এর মধ্যে, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প, যার আওতায় ১৬ লক্ষ অতিরিক্ত পরিবারকে নতুন বাড়ি দেওয়া হবে। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৯,৬০০ কোটি টাকা।
এছাড়া, মমতা সরকারের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে:
- ডিএ বৃদ্ধি: রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের জন্য ৪% ডিএ বাড়ানোর ঘোষণা, যার ফলে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ পার্থক্য কমে ৩৫% হবে।
- ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান: ঘাটাল অঞ্চলের নদী ভাঙন রোধের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ আগামী দু’বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
- নদী বন্ধন প্রকল্প: নদী ভাঙন রোধে আরও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
- আশাকর্মী স্মার্টফোন: ৭০ হাজার আশাকর্মীকে স্মার্টফোন দেওয়ার জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব।
- গঙ্গাসাগর সেতু: গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
- কৃষি উন্নয়ন: কৃষিবিভাগের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা এবং কৃষি বিপণন বিভাগের জন্য ৮২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
- গ্রামীণ উন্নয়ন: গ্রামীণ পথঘাটের জন্য ১,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ।
- উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন: উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য ৮৬৬.২৬ কোটি টাকা এবং পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ৭৫৬.৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব।
লক্ষ্য: গ্রামমুখী উন্নয়ন
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এবারের বাজেট ‘গ্রামমুখী’ উন্নয়নের দিকে ইঙ্গিত করছে। শহুরে মধ্যবিত্তদের জন্য বিশেষ কিছু না থাকলেও, গ্রামীণ অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বাজেটের মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের জন্য নানা প্রকল্প চালু থাকার কথাও বলা হয়েছে, যার মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং কৃষকবন্ধু প্রকল্পের মতো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও জানিয়েছেন, তার সরকারের বাজেট তৈরি করার লক্ষ্য রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন, ভোটের লক্ষ্য নয়।