খবর এইসময় ডেস্ক: ফের প্রমাণ মিলল, দেশের সবচেয়ে নিরাপদ শহর কলকাতা (Kolkata)। দেশের ১৯টি প্রধান শহরের মধ্যে কলকাতার অপরাধের হার সব থেকে কম। শুধু ২০২১-র পরিসংখ্যানে নয়,পর পর ২ বছর কলকাতার ঝুলিতে সেরার শিরোপা। কিন্তু তাতে কি। এনসিআরবি রিপোর্টে (NCRB Report) আলো যেমনটি আছে তেমনই অন্ধকারও রয়েছে যথেষ্ট। অ্যাসিড হামলায় এ বারও শীর্ষে বাংলা। দুয়ে উত্তরপ্রদেশ, একে বাংলা। এককথায়, অ্যাসিড হামলায় ‘এগিয়ে বাংলা’!
দেশে প্রতি বছর যা অ্যাসিড হামলার ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়, তার বেশিরভাগই ঘটে দু’রাজ্যে। বাংলা ও উত্তরপ্রদেশ। গত আট বছরের এনসিআরবি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে ঘুরে-ফিরে রয়েছে এই দুই রাজ্যই। ৫ বার বাংলা শীর্ষে, ৩ বার উত্তরপ্রদেশ। একমাত্র স্বস্তির তথ্য, ৮ বছরে এ বারই সবচেয়ে কম অ্যাসিড হামলার ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে দেশে মোট হামলার ঘটনা ২৮১-তে পৌঁছেছিল, সেখানে ২০২১-এ তা কমে হয়েছে ১৭৪। বাংলাতেও লিপিবদ্ধ হামলার সংখ্যা কমেছে। রাজ্যে ৩৪, উত্তরপ্রদেশে ২৫।
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রি করা যায় না। কাউকে বিক্রি করলেও, ক্রেতার নাম-ঠিকানা, কেনার কারণ সব লিখে থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু, শহর বা গ্রাম- কোথাও কেউ নিয়ম মানে না। নিয়ম কার্যকর করতে প্রশাসনকেও কড়া হতে দেখা যায়নি। এমনই অভিযোগ দমদমের অ্যাসিড-যোদ্ধা সঞ্চয়িতা যাদবের।আক্ষেপের সুরে তিনি জানান, “গত কয়েক বছরে কোনও পরিবর্তন দেখলাম না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। বহু চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারিনি আমরা। উনি মহিলাদের পাশে থাকার কথা বলেন, কিন্তু অ্যাসিড হামলা নিয়ে কখনও একটি শব্দও খরচ করতে দেখলাম না!” সাত বছর ধরে লড়াই চালিয়ে গত বছরই বিচার পেয়েছেন সঞ্চয়িতা। আদালতের নির্দেশে ১৪ বছরের কারাদণ্ডও হয়েছে হামলাকারীর।
যদিও রাজ্যের অ্যাসিড-যোদ্ধারা মনে করেন, আদতে সংখ্যাটা আরও বেশি। জয়নগরের মনীষা পৈলান সাত বছর আগে অ্যাসিড আক্রান্ত হন। তাঁর কথায়, “সব ঘটনা থানা পর্যন্ত পৌঁছয় না। বাড়ির লোক চাপা দিয়ে দেয়। ঘটনার সময় শারীরিক যন্ত্রণা, মানসিক যন্ত্রণা এমন জায়গায় থাকে, সব আক্রান্তের পক্ষে থানায় পৌঁছনোও সম্ভব হয় না। তাছাড়া দীর্ঘ লড়াই। সবার পক্ষে লড়াই চালানোর ধৈর্যশক্তি থাকে না।” মনীষা নিজে এখনও লড়াই চালাচ্ছেন। সাত বছরেও বিচার পাননি। অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত, দিব্যি সংসার করছে। বিচার প্রক্রিয়া অতি শ্লথ। তবু হার মানতে নারাজ মনীষা।
অ্যাসিড হামলা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সিনেমা হয়েছে। ২০২০ সালে ‘ছপাক’ সিনেমার মাধ্যমে আক্রান্ত মালতীর দুর্বিষহ যন্ত্রণার কথা ফুটিয়ে তুলেছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। লক্ষ্মী আগরওয়ালের সেই কাহিনি গোটা দেশ দেখেছে, কিন্তু সচেতনতা আসেনি। বন্ধ হয়নি হামলা। এ রাজ্যের চিত্রও সেটাই বলছে।